ধানের শীষ ফিরল মাছুদার হাতে

মাছুদা মোমিন
মাছুদা মোমিন

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা আর নাটকীয়তার পর গতকাল শুক্রবার নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন মাছুদা মোমিন।

এক সপ্তাহ আগে মাছুদা মোমিনের বদলে তাঁর দেবর আবদুল মুহিত তালুকদারকে ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে থেকে প্রার্থী হওয়ায় উচ্চ আদালতের আদেশে আটকে যায় তাঁর প্রার্থিতা। ধানের শীষের প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়ে নির্বাচনী এলাকা। কিন্তু ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া আর হচ্ছে না মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী জাপার সাংসদ নুরুল ইসলাম তালুকদারের। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মুহিত তালুকদারের পরিবর্তে মাছুদা মোমিনকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। গতকাল প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণার মাঠে ফিরেছেন মাছুদা মোমিন।

বগুড়া-৩ আসনে প্রথমে বিএনপি থেকে ধানের শীষের প্রাথমিকভাবে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয় বিএনপির সাবেক সাংসদ ও মানবতাবিরোধী মামলায় পলাতক আসামি আবদুল মোমিন তালুকদার, তাঁর স্ত্রী মাছুদা মোমিন ও তাঁর ভাই আবদুল মুহিত তালুকদারকে। বাছাইয়ে উপজেলা পরিষদের পদ থেকে পদত্যাগ না করায় বাতিল হয় মুহিতের মনোনয়নপত্র। মোমিন তালুকদারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থাকায় বিএনপি থেকে চূড়ান্ত দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় তাঁর স্ত্রী মাছুদা মোমিনকে। তিনি প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণাও শুরু করেন। এদিকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন মুহিত তালুকদার। পরে হাইকোর্ট আদেশ দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে থেকেও প্রার্থী হতে পারবেন মুহিত। এ কারণে বিএনপি থেকে তাঁকেই ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়। মুহিত প্রচারণাও শুরু করেন। তবে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এতে আবারও আটকে যায় মুহিতের প্রার্থিতা।

মাছুদা মানবতাবিরোধী মামলার পলাতক আসামি আবদুল মোমিন তালুকদারের স্ত্রী। এখানে মহাজোটের প্রার্থী জাপার সাংসদ নুরুল ইসলাম।

অন্যদিকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে মাছুদা মোমিন হাইকোর্টে রিট করেন। বৃহস্পতিবার এক আদেশে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মুহিত তালুকদারের বদলে মাছুদা মোমিনকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

আবদুল মুহিত তালুকদার বলেন, ‘প্রার্থিতা আটকে দেওয়াটা সরকারের চক্রান্ত। আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার রিভিউ আবেদন করেছি। খেলা এখনো শেষ হয়নি।’

মাছুদা মোমিন বলেন, আদালতের আদেশে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তিনিই এখন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী।

এই আসনে ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে সাংসদ হন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মোমিন তালুকদার। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘খোকা রাজাকার’ নামে পরিচিত ছিলেন। আদমদীঘি উপজেলা ‘রাজাকার কমান্ডার’ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে খুন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তা ছাড়া তাঁর বাবা আবদুল মজিদ তালুকদার ছিলেন ওই এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান।

আদমদীঘির কায়েতপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুবিদ আলী ১৯৭১ সালে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ ১৯ জনকে হত্যার অভিযোগে আবদুল মোমিনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। গত ১৮ মে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তারপর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।  ২০১৪ সালে ‘একতরফা’ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন জাপার নুরুল ইসলাম তালুকদার।