প্রচারে সক্রিয় পাঁচ প্রার্থী

সাহারা খাতুন, আফরোজা আব্বাস, শামীমা আরা বেগম, শম্পা বসু, হাসিনা হোসেন, নাঈমা খালেদ, মাহফুজা আক্তার, সুমি আক্তার
সাহারা খাতুন, আফরোজা আব্বাস, শামীমা আরা বেগম, শম্পা বসু, হাসিনা হোসেন, নাঈমা খালেদ, মাহফুজা আক্তার, সুমি আক্তার

এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মহানগরের ১৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টি আসনেই কোনো নারী প্রার্থী নেই। বাকি পাঁচটি আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের মোট আটজন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন প্রার্থী মাঠে সক্রিয় থাকলেও অন্যদের তেমন কোনো তৎপরতা এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

সেগুনবাগিচার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মহানগরের সংসদীয় আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১৭ জন নারী মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন। তাঁদের নয়জন ফরম জমা দেন। তাঁদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশন আটজনকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়। বিপরীতে এই আসনগুলোতে মোট পুরুষ প্রার্থীর সংখ্যা ১২৪ জন।

প্রতীক বরাদ্দের পর মাঠে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগ থেকে দুবার নির্বাচিত সাংসদ ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন। নৌকা প্রতীকে তিনি ঢাকা–১৮ আসনে নির্বাচন করছেন।

 ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ঢাকা–৯ আসনে এবং বিএনপির শামীমা আরা বেগম ঢাকা–১১ আসনে নির্বাচন করছেন।

 বাম গণতান্ত্রিক জোটের হয়ে প্রার্থী শম্পা বসু ঢাকা–৮ আসনে মই প্রতীকে এবং নাঈমা খালেদ ঢাকা–১৬ আসনে কোদাল প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

 ঢাকা–৮ আসন থেকে গাভী প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সুমি আক্তার ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের হাসিনা হোসেন হারিকেন প্রতীক পেলেও তাঁদের এখন পর্যন্ত কোনো প্রচার কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনও তাঁদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেখেননি।

 একইভাবে ঢাকা–৯ আসনে আম প্রতীক পাওয়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মাহফুজা আক্তারের কোনো প্রচার কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

 সরকারদলীয় প্রার্থী বাদে মাঠে সক্রিয় চার প্রার্থীর অভিযোগ, প্রচারকাজে তাঁরা নানা বাধার মুখে পড়ছেন। এমনকি গণসংযোগকালে হামলার অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির কথা বললেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।

১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর নিজ নির্বাচনী এলাকায় জোরেশোরে প্রচারণার কাজে নামেন নৌকা প্রতীকের সাহারা খাতুন। প্রায় প্রতিদিন এই সংসদীয় আসনের বিভিন্ন এলাকায় তিনি গণসংযোগ চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে চলছে দলের লোকজন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মতবিনিময়, আলোচনা সভা এবং উঠান বৈঠকের মতো কর্মসূচি। ১৭ ডিসেম্বর সোমবার কয়েক শ কর্মী–সমর্থক নিয়ে দক্ষিণখান এলাকায় এক গণসংযোগ কর্মসূচিতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে নৌকার পক্ষে জোয়ার উঠেছে। জয় আমাদের সুনিশ্চিত।’

এদিকে ১২ ডিসেম্বর ঢাকা–৯ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস প্রথমবার গণসংযোগে নেমেই হামলার মুখে পড়েন। সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবারও তাঁর গণসংযোগ কর্মসূচিতে আবার হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার পর তিনি শাহজাহানপুরের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্দেশে প্রশাসনের সহযোগিতায় এ হামলার ঘটনাগুলো ঘটছে। এরপর তাঁকে কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।

আবার সরাসরি হামলার ঘটনা না ঘটলেও নেতা–কর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা–১১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শামীমা আরা বেগম। তিনি বলেন, মামলা ও পুলিশি হয়রানির কারণে তিনি গণসংযোগ কর্মসূচিতে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা–কর্মীদের পাচ্ছেন না। যে কারণে দলের নারী কর্মী এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের নিয়ে তাঁকে গণসংযোগ কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।

একইভাবে প্রচারকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে গত বুধবার মিরপুরের বিহারি ক্যাম্প, কালশী ও বর্ধিত পল্লবী এলাকায় গণসংযোগ করেন কোদাল প্রতীকের প্রার্থী নাঈমা খালেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার নিজে আইন মানে না, কিন্তু অন্য দলের বিরুদ্ধে আইন না মানার অভিযোগ করছে। আজ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের নমুনা জনগণ দেখছে।  বিভিন্ন জায়গায় আমাদের দলের ও জোটের প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, সমাবেশে বাধা দেওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটছে।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের আরেক প্রার্থী শম্পা বসুও প্রচারকাজে বাধার অভিযোগ করছেন। গত বুধবারও তিনি দল ও জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ফকিরেরপুল পানির ট্যাংক, আরামবাগ, বেইলি রোড, শান্তিনগর, পল্টনসহ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ চালান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এদিন মৌচাক এলাকায় তাঁদের পথসভা করতে দেওয়া হয়নি। পোস্টার লাগাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমন শঙ্কা আর নিরাপত্তাহীনতার বোধ নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত প্রচার চালানো কঠিন।’