প্রকাশ্যে নৌকা, গোপনে ধানের শীষের প্রচারণা

কক্সবাজার-৩ আসনে (কক্সবাজার সদর ও রামু) নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ। অপর দিকে হামলা-মামলার আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপির কর্মীরা। এ কারণে ধানের শীষের প্রার্থী কৌশল বদলে গোপনে গণসংযোগ করছেন।

গতকাল রোববার সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রামু ও সদর উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ধানের শীষের তুলনায় নৌকার প্রচারণা অনেক বেশি। নির্বাচনী কার্যালয়, পোস্টারও বেশি নৌকার। কয়েকটি গ্রামে দেখা গেছে, গাড়িতে মাইক বেঁধে প্রচার হচ্ছে নৌকার প্রার্থী কমলের ভাষণ। অন্যদিকে ধানের শীষের পক্ষে পথসভা-গণসংযোগ হচ্ছে অনেকটা গোপনে।

গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটায় সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের নাইক্ষ্যংদিয়া গ্রামের নারীদের নিয়ে ধানের শীষের পথসভা করেন শিরিন রহমান। তিনি বিএনপি প্রার্থীর স্ত্রী। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সভাটি ভন্ডুল করে দেয় এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম উদ্দিন ও যুবদল নেতা আমান উল্লাহকে ধরে নিয়ে যায়।

বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রচারণার শুরু দিকে ধানের শীষের পথসভা-গণসংযোগ কোন গ্রামে হবে, তা আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হতো। এখন গোপন রাখা হচ্ছে। হামলা ও ভাঙচুরের ভয়েই এই কৌশল নেওয়া হচ্ছে।

রামুর রাজারকুলের ভোটার মো. আলমগীর বলেন, চার-পাঁচ দিন আগেও দুই দলের প্রার্থীরা এলাকায় এসে পথসভা-গণসংযোগ করেছেন। এখন বিএনপির প্রকাশ্য প্রচারণা বন্ধ।

বিএনপি নেতারা বলছেন, পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে তাঁরা প্রচারণা চালাতে পারছেন না। নৌকার কার্যালয়ে নিজেরাই অগ্নিসংযোগ করে মিথ্যা মামলা দিয়ে আসামি করা হচ্ছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের। উদ্দেশ্য—বিএনপিকে এলাকাছাড়া করা। কিন্তু বিএনপির দুর্গ ভাঙা সহজ হবে না। সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে লাখো ভোটের ব্যবধানে ধানের শীষের জয় হবে।

ধানের শীষের প্রার্থী লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ধানের শীষের জোয়ার দেখে নৌকার প্রার্থী পাগল হয়ে গেছেন। এখন তিনি যেকোনো উপায়ে জয় লাভের স্বপ্ন দেখছেন। এ আসনের ২২টি ইউনিয়নে ২২টি ভুয়া মামলা দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের এলাকা ছাড়া করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, গত তিন দিনে সদরে নৌকার কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের দায়ে পাঁচটি মামলা হয়েছে। আসামি হয়েছে পাঁচ শতাধিক।

অন্যদিকে রামু থানার ওসি মো. আবুল মনসুর বলেন, সেখানেও নৌকার কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও আওয়ামী লীগের লোকজনকে মারধরের অভিযোগে পৃথক ৬টি মামলা হয়েছে। এতে শতাধিক লোক আসামি। বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ও নেতাদের ঘরবাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগে গতকাল পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেননি।

এদিকে প্রচারণার শুরু থেকে আসনটি দখলে নিতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। এ সময় তিনি লবণ আমদানি বন্ধ ও কক্সবাজারে আরও উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি দেন। এতে ভোটাররা খুশি হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দাবি।

কক্সবাজার লবণ চাষি সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন, জেলায় উৎপাদিত লবণ দিয়ে সারা দেশের চাহিদা পূরণ হয়। অথচ সিন্ডিকেট চক্র ভারত থেকে লবণ আমদানি করে দেশের লবণশিল্পকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এতে ৫৫ হাজার প্রান্তিক চাষিসহ অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লবণ আমদানি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় মানুষ খুশি। তাঁরা নৌকার পক্ষে রায় দেবেন। নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় লোকজন নৌকায় ভোট দেবেন। ইতিমধ্যে সর্বত্র নৌকার গণজোয়ার শুরু হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নিশ্চিত পরাজয় দেখে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।