নারী ভোটারের কাছে যাচ্ছেন না কেউ

মর্জিনা খাতুন একজন গৃহিণী। বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার চকশাদী গ্রামে। তাঁর দাবি, এর আগের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর আগে প্রার্থীর লোকজন যেভাবে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নারী ভোটারের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছেন, এ বছর তেমনটি নেই।

উপজেলার কুর্নিঘাট গ্রামের কাজলী খাতুন বলেন, বাড়ির সামনে দিয়ে বিভিন্ন দলের দলীয় প্রতীকের লোকজন গাড়িবহর নিয়ে যান। কিন্তু গ্রামের নারী ভোটারের কাছে এখনো ভোট চাইতে কেউ যাননি।

উপজেলার চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারজন নারী শিক্ষক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও তাঁরা দেখেছেন, বিভিন্ন দলের নারী ও পুরুষ কর্মীরা দল বেঁধে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দলীয় প্রতীকের প্রচারপত্র বিতরণ করেছেন। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন। ওই সময় ভোট প্রার্থনা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ভোট উৎসবে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখনো তাঁদের এমনভাবে ভোট প্রার্থনা করতে দেখা যায়নি।

শেরপুর উপজেলার নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের মধ্যে শেরপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৮ জন। তাঁদের মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৫৩ জন।

এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ১০ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

গত শনিবার ও গতকাল রোববার উপজেলার কুসুম্বী, গাড়িদহ, খামারকান্দি, খানপুর, সুঘাট, মির্জাপুর, শাহবন্দেগী ও বিশালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে অন্তত ৩০ জন নারীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গৃহিণী, নারী কৃষিশ্রমিক, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে শাহবন্দেগী ইউনিয়নের শেরুয়া গ্রামের হেলেজা খাতুন বলেন, ভোটের উৎসব তিনি এখনো দেখতে পাননি। এখনো গ্রামের বেশির নারী প্রার্থীর ছবিও দেখতে পাননি। কৃষ্ণপুর নামাবালা গ্রামের মিনুবালা মোহন্ত বলেন, কোনো প্রার্থীর পক্ষে তাঁর বাড়িতে এসে কেউ ভোট চাননি।

শেরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম গতকাল বিকেলে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে তিনিসহ তাঁর দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন। এ পর্যন্ত তাঁদের দলের অর্ধশত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভোটারের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট প্রার্থনাও করতে পারছেন না তাঁরা। দলীয় প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বলেন, উপজেলার প্রত্যেক গ্রামের তাঁদের দলীয় নারী-পুরুষ নেতা-কর্মীরা শিগগিরই বাড়ি বাড়ি ঘুরে নারী ভোটারের কাছে নৌকা প্রতীকের ভোট চাইবেন। এমন উদ্যোগ তাঁরা নিয়েছেন।