দুই দশকের দ্বন্দ্ব ভুলেছে জেএসএস-ইউপিডিএফ!

পাহাড়ের প্রধান দুই আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) দীর্ঘ দুই দশক পর দ্বন্দ্ব ভুলে সমঝোতায় এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করেছেন। অতীতে জেএসএস সমর্থিত প্রার্থীকে ইউপিডিএফের প্রভাবাধীন এলাকায় প্রচারণা চালাতে দেওয়া হয়নি। তবে এবারের নির্বাচনে জেএসএস সমর্থিত প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার ইউপিডিএফের ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকায় যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। চালাচ্ছেন প্রচারণাও। ইউপিডিএফও তাঁর প্রচারণায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে বলে জানা গেছে।

আঞ্চলিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউপিডিএফ যেসব এলাকায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী সেসব এলাকায় আগের দুটি নির্বাচনে জেএসএস সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানো যায়নি। সেখানে জেএসএস প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানারও লাগানো যায়নি। এবার তাঁর ব্যতিক্রম ঘটেছে। ইউপিডিএফের প্রভাবাধীন এলাকায় এবার জেএসএস সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চলছে। পথসভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জানা গেছে, ১৭ ডিসেম্বর রাঙামাটির কাউখালী সদর ও ঘাগড়া ইউনিয়নের ইউপিডিএফের ঘাঁটি তালুকদারপাড়ায় জেএসএস সমর্থিত প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার প্রচারণায় যান। সেখানে ইউপিডিএফের সমর্থক নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে তাঁর পক্ষে প্রচারণা চালান। ইউপিডিএফের প্রভাবাধীন নানিয়ারচর উপজেলার টিঅ্যান্ডটি, সদর উপজেলার সাপছড়ি, কুতুকছড়ি ও ঘিলাছড়ি এলাকায় ২১ ডিসেম্বর সমাবেশ, পথসভা, জনসংযোগ করেছেন ঊষাতন তালুকদার। এসব সভা-সমাবেশের আয়োজকের দায়িত্ব পালন করে ইউপিডিএফ।

সর্বশেষ গতকাল রোববার বেলা ১১টায় জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে ঊষাতনের সমর্থনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সমর্থকেরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

>ইউপিডিএফের প্রভাবাধীন এলাকায় এবার জেএসএস সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চলছে। পথসভাও হচ্ছে।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেতা প্রসীত বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে একটি পক্ষ পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে। চুক্তির বিরোধিতাকারীরা ১৯৯৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ( ইউপিডিএফ) গঠন করে। এরপর দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় ইউপিডিএফ ও জেএসএসের মধ্যে। ২০১৫ সালে একাধিকর সমঝোতা বৈঠকের পর সংঘাত বন্ধ হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই বিবদমান দল এখন নির্বাচনী মাঠে এক হয়ে সিংহের প্রতীক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।

ইউপিডিএফের রাঙামাটি জেলা সংগঠক শান্তি দেব চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের অনুরোধে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। আমাদের রাঙামাটি আসনের কোনো প্রার্থী না থাকায় জেএসএসকে প্রচারণা চালাতে দেওয়া হচ্ছে।’  

জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও সাংসদ প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউপিডিএফের সঙ্গে কোনো সমঝোতা বিষয় আমার জানা নেই। তবে ইউপিডিএফের এলাকায় প্রচারণা, সমাবেশ, পথসভা ও জনসংযোগ করা হচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর আমন্ত্রণে আমরা সেখানে যেতে পারছি। ওই সব এলাকায় দীর্ঘ দুই দশক পর যেতে পেরে আমি খুবই আনন্দ পেয়েছি।’