তফসিল ঘোষণার পর খুলনায় ৫৩ মামলা

>

নির্বাচনে এমন পরিবেশ চলতে থাকলে ভোটের দিন বিএনপির প্রার্থীরা লোকজন পাবেন না বলে শঙ্কা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর খুলনা জেলার চারটি আসনে (মহানগর বাদে) বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ৫৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অসংখ্য নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ভয় দেখানো হচ্ছে। নির্বাচনে এমন পরিবেশ চলতে থাকলে ভোটের দিন বিএনপির প্রার্থীরা লোকজন পাবেন না।

গতকাল রোববার খুলনা নগরের কেডি ঘোষ সড়কে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম। শাসক দলের সন্ত্রাস, পুলিশের হয়রানি, মিথ্যা মামলায় নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হওয়ার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে হওয়ায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের মতো প্রশাসনিক মহড়ায় রূপান্তরিত হবে কি না, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে সিইসি, খুলনা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিভিন্ন উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ করা হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না বলে ঐক্যফ্রন্ট যে অভিযোগ করেছিল, সারা দেশে ধানের শীষের কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তারে তারই প্রমাণ মিলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেলা বিএনপির সভাপতি বলেন, ধানের শীষ প্রতীকের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার–প্রচারণায় গেলে প্রতিনিয়ত হামলা, মামলা ও গণগ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গতকাল পর্যন্ত জেলার ৯টি থানায় ৫৩টি মামলা করেছে শাসক দল ও তাদের আজ্ঞাবহ পুলিশ প্রশাসন। ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারে থাকা নেতা–কর্মীদের পুলিশ ধরে এনে তথাকথিত ও পরিকল্পিত নাশকতার নাটক সাজিয়ে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে। এমনকি প্রতিটি মামলায় ৫০ থেকে ৬০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হচ্ছে। পুলিশ নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে পারলে চলছে অমানুষিক নির্যাতন। না ধরতে পারলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তফসিল ঘোষণার পর খুলনা-১ আসনের (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) দাকোপ থানায় একটি ও বটিয়াঘাটা থানায় চারটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচজনকে।

খুলনা-৪ আসনের (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) রূপসা থানায় সাতটি মামলা করা হয়েছে। তেরখাদা থানায় মামলা হয়েছে তিনটি। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। দিঘলিয়া থানায় চারটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৮ জনকে।

খুলনা-৫ আসনের (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) ফুলতলা থানায় পাঁচটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাতজনকে। ডুমুরিয়া থানায় হওয়া সাতটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫ জন। এ ছাড়া খুলনা-৬ আসনের (পাইকগাছা-কয়রা) কয়রা থানায় ১৫টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৫০ জনকে। আর পাইকগাছা থানার সাতটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন।

জেলা বিএনপির সভাপতি কারাগারে আটক সব নেতা–কর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেসব ‘গায়েবি’ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী নামানোর অনুরোধ করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা আরও অভিযোগ করেন, নিজেরা নিজেদের অফিসে আগুন নিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করছে ক্ষমতাসীনেরা। যেভাবে গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, তাতে নির্বাচনের দিন প্রার্থীর পক্ষে কোনো লোকজন থাকবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।