প্রতীক বরাদ্দ পাননি মাছুদা

বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির প্রার্থীর ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ এখনো ঝুলে আছে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মাছুদা মোমিনের নামে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দের আদেশ দিলেও নির্বাচন কমিশন গত চার দিনেও প্রতীক বরাদ্দ দেয়নি।

এদিকে, গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে রিট আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করা হলে তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। এখনো প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা না কাটায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।

গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মাছুদা মোমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের এক আদেশে আমি ধানের শীষের প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছি। আদেশের কপিও নির্বাচন কমিশন এবং জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিয়েছি। তা ছাড়া, গতকাল নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। কিন্তু তা আপিল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছেন। সুতরাং আমার নামে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দে আর কোনো বাধা রইল না। তারপরও আমাকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।’

বগুড়া-৩ আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মাছুদা মোমিনের স্বামী আবদুল মোমিন তালুকদার ওরফে খোকন নির্বাচিত হন। তিনি বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খোকন রাজাকার কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি মানবতাবিরোধী মামলার অভিযুক্ত আসামি। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদিকে ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে জাপার (এরশাদ) লাঙ্গল প্রতীকে সাংসদ হন নুরুল ইসলাম তালুকদার। এবারও তিনি মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

>বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের এক আদেশে মাছুদা মোমিনকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিতে বলা হয়। কিন্তু আজও তিনি প্রতীক বরাদ্দ পাননি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পান সাবেক সাংসদ আবদুল মোমিন তালুকদার, তাঁর স্ত্রী মাছুদা মোমিন এবং তাঁর ছোট ভাই আবদুল মহিত তালুকদার। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই পর্বে আবদুল মুহিত তালুকদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। পরে তিনি উচ্চ আদালতে রিট করে মনোনয়নপত্র ফিরে পান। দল থেকে চূড়ান্তভাবে তাঁকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়। কিন্তু পরে আপিল বিভাগ তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করলে এ আসনটি বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়ে। পরে মাছুদা মোমিন গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে রিট করে ধানের শীষ প্রতীক ফিরে পান।

দুপচাঁচিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দুই উপজেলার প্রতিটি পৌরসভা ও ইউনিয়নে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রস্তুত। আমরা নির্বাচনী প্রচারণা কমিটি গঠন করেছি। শুধু নির্বাচন কমিশনের অপেক্ষায় রয়েছি। কিন্তু আমাদের প্রার্থীর নামে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। এতে আমরা উদ্বিগ্ন।’

আদমদীঘি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সান্তাহার পৌরসভার মেয়র তোফাজ্জল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন অকারণেই প্রতীক বরাদ্দে হয়রানি করছে। এভাবে ক্ষতি করে লাভ নেই। ভোটাররা ধানের শীষ প্রতীকের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এখনো কোনো চিঠি পাননি। চিঠি পেলেই মাছুদা মোমিনের নামে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।