এক পক্ষে উৎসব, অন্য পক্ষে শঙ্কা

আদাবরের রিং রোড। রাস্তার পাশে ছোট্ট চায়ের দোকান। সেখানে চায়ের পেয়ালা হাতে গল্প করছেন নানা বয়সী কয়েকজন ব্যক্তি। এলাকায় নির্বাচনের কী অবস্থা? জানতে চাইলে তাঁদের একজন সড়ক বিভাজকের গাছ ও খুঁটি দেখিয়ে বললেন, ওইখানে আগে ধানের শীষের কিছু পোস্টার ছিল। এখন সেখানে ঝুলছে নৌকার পোস্টার। এই হচ্ছে নির্বাচনের অবস্থা। চায়ের দোকান থেকে ফেরার সময় ওই ব্যক্তির অনুরোধ, ‘ভাই আমার নাম–ঠিকানা লেইখেন না, এলাকায় সমস্যা হতে পারে।’

আদাবরের রিং রোড ঢাকা-১৩ নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদেক খান, বিএনপির প্রার্থী আবদুস সালাম। আপাতদৃষ্টিতে এলাকা ঘুরে মনে হবে, নির্বাচনের পরিবেশ খুবই শান্ত। কিন্তু এলাকার লোকজন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। ভোটের আনন্দ, উচ্ছ্বাস বা উৎসব কেবল এক দলে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতা–কর্মীরা কোণঠাসা। তাঁদের শঙ্কা, শেষ পর্যন্ত ভোট সুষ্ঠু হবে কি না।

আনোয়ার নামে আদাবরের একজন ভোটার বলেন, আগে নির্বাচন হলে সব পক্ষের মিছিল হতো, মাইকিং হতো, চায়ের দোকানে ভোট নিয়ে তর্ক হতো। এখন এর কিছুই নেই। ছোট দু–একটি দল ছাড়া মিছিল-মাইকিং সবই নৌকার পক্ষে। এলাকায় বিএনপির লোকজন দাঁড়াতেও পারছেন না।

আনোয়ারসহ স্থানীয় ১৫-২০ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় প্রতিদিনই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মিছিল দেখা যায়। কিন্তু বিএনপি এক দিনও কোনো মিছিল করতে পারেনি।

সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই আলোচনায় ছিল আসনটি। কারণ, শুরুতেই এই আসনে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সহিংসতার ঘটনায় দুজন নিহত হন। এক পক্ষে ছিলেন আসনটির বর্তমান সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক, আরেক পক্ষে সাংসদ পদপ্রার্থী সাদেক খান। বিভক্তি ছিল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও।

এলাকার রাজনীতি–সচেতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় দুই বড় দলেরই অভ্যন্তরীণ বিভেদ কেটেছে। নানকের কট্টর সমর্থকেরাও সাদেক খানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই আসনে মোট প্রার্থী ১০ জন। কিন্তু এলাকা ঘুরে নৌকা, টেলিভিশন, হাতপাখা, কুলা ও কাস্তে প্রতীকের পোস্টার দেখা গেছে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, সাদেক খান স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় দলমত–নির্বিশেষে সবাই তাঁর পক্ষে কাজ করছেন। ভোটাররা উন্নয়নের পক্ষে।