ভয়ভীতি ও হুমকিতে বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা ঘরছাড়া

কাজী মনিরুজ্জামান
কাজী মনিরুজ্জামান

ভয়ভীতি ও হুমকিতে বাড়িঘরছাড়া নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামানের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ ও প্রচারণায় নামলেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী প্রচারণা চালাচ্ছেন নির্বিঘ্নে।

গত রোববার ও গতকাল সোমবার বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান ও তাঁর কয়েকজন কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তাঁরা পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন।

এদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) গতকাল বিকেলে উপজেলার ভুলতা, গাউছিয়া, গোলাকান্দাইলে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এ সময় গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নে বিশ্বাস করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট দিতে হবে।

রূপগঞ্জের রূপসী এলাকার যুবদলের নেতা আফজাল হোসেন বলেন, জামিনে থাকা সত্ত্বেও সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ পাঁচবারের বেশি তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে।

ভোলাবো ইউনিয়নের টাওড়া গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিএনপির সমর্থক মো. শরীফ বলেন, কাজী মনিরুজ্জামানের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর করেছেন। তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই এখন ঘরছাড়া।

ভোলাবো ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন বলেন, ‘সরকারি দলের লোকজনের মামলা-হামলার ভয়ে বিএনপির পুরো ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা এলাকাছাড়া। আমরা এলাকায় যেতে পারছি না এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণাও চালাতে পারছি না।’

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামলেই পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হয়রানি করছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের মা–বাবাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। নির্বাচনে আমরা যাতে পোলিং এজেন্ট হতে না পারি, সে জন্য নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গোলাম দস্তগীর গাজীর লোকজন শতাধিক নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। সরকার সমর্থকেরা নিজেরাই ঘটনা সাজিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে রাখছে, যাতে নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীর পক্ষে কেউ কাজ না করতে পারেন।’

বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অবিলম্বে সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বর সবাই যাতে যাঁর যাঁর ভোট দিতে পারেন এবং যাঁকে পছন্দ, তাঁকেই দিতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যারা দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনী সভাস্থলে আমার কর্মী-সমর্থকেরা যাতে না আসতে পারেন, এ জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান নিয়ে মহড়া দেয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশের ভূমিকা হতাশাজনক।’

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘কারা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তা আমার জানা নেই।’ যাঁরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

অভিযোগ অস্বীকার করে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক দাবি করেন, অহেতুক পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, ‘এ আসনে একটু ঝামেলা আগে থেকেই ছিল। এ বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’