তাঁদের পা চলে না ওড়েন স্বপ্নের ডানায়

শারীরিক প্রতিবন্ধী পাইলট মাইক লম্বার্গ (বাঁয়ে) ও গুল্যুমে ফেরেল। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে।  প্রথম আলো
শারীরিক প্রতিবন্ধী পাইলট মাইক লম্বার্গ (বাঁয়ে) ও গুল্যুমে ফেরেল। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে। প্রথম আলো

হাঁটতে পারেন না তাঁরা। তাতে কী। উড়োজাহাজ চালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন তাঁরা। শুধু বাংলাদেশই নয়, তাঁরা ভ্রমণ করতে চান আরও ৪০টি দেশ। ইতিমধ্যে ১০টি দেশ ঘুরেছেন। প্রতিবন্ধিত্ব জয় করে নিজেদের অদম্য হয়ে ওঠার গল্পই শোনালেন তাঁরা।

গতকাল দুপুরে চিটাগাং ক্লাবের রেস্টহাউসে ওই গল্প শোনান দক্ষিণ আফ্রিকার মাইক লম্বার্গ ও ফ্রান্সের গুল্যুমে ফেরেল। তাঁরা নিজেদের ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা জানান। দুই পাইলট বলেন, তাঁদের পরবর্তী গন্তব্য থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই শহর। ঘুরে ঘুরে তাঁরা একটি বার্তাই পৌঁছে দিনে চান। আর তা হলো, প্রতিবন্ধীরা সব পারেন।

সেই ৯ বছর বয়স থেকেই বিমান চালানোর শখ ফরাসি নাগরিক ফেরেলের। ১৯ বছর বয়সে প্রথম বিমানে ওঠেন। সেই থেকে স্বপ্নপূরণের পথে ভালোই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। ২৫ বছর বয়সে এক বিমান দুর্ঘটনায় আঁচড় পড়ে স্বপ্নের গায়ে। দুর্ঘটনায় দুই পা অচল হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু তা তাঁকে থামিয়ে দিতে পারেনি। স্বপ্নের ডানায় ভর করে আর কঠোর শ্রম ও নিষ্ঠাকে অবলম্বন বানিয়ে উড়োজাহাজে চষে বেড়াচ্ছেন এ–দেশ থেকে ও–দেশ। জার্মানির তৈরি করা বিশেষ উড়োজাহাজ চালাচ্ছেন তিনি।

হুইলচেয়ারে বসে ফেরেল বললেন, এই কিছুদিন আগেও প্রতিবন্ধী শব্দ ব্যাখ্যা করার মতো কোনো ভাষা তাঁর কাছে ছিল না। তবে এখন প্রতিবন্ধী শব্দকে পুরোপুরি বুঝতে হলে তাঁর সঙ্গেই কথা বলতে হবে! তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশের পার্থক্য আছে। যেমন ইউরোপে তাঁদের দায়িত্ব নেয় সরকার। এখানে সে সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় কোমরে আঘাত পেয়ে দুই পা অচল হয়ে যায় লম্বার্গের। পরে ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি উড়োজাহাজ চালনা শুরু করেন। তবে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ নয়, সাধারণ এয়ারক্রাফট। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সবাইকে পাইলট হতে বলছি না। নিজ নিজ জায়গা থেকেই উঠে দাঁড়াতে হবে। কাজ করতে হবে।’

‘হ্যান্ডিফ্লাইট-অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’–এর কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের আমন্ত্রণে গত শুক্রবার আলাদা উড়োজাহাজে করে চট্টগ্রাম আসেন এ দুজন। তাঁরা যে ছোট্ট বিমান চালাচ্ছেন, তা প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে। এ ভ্রমণে তাঁদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন ডেনিয়েল। ইতালি, গ্রিস, মিসর, সৌদি আরব, দুবাই, পাকিস্তান ও ভারত হয়ে চট্টগ্রাম এসেছেন। ৪০টি দেশ ভ্রমণ করে সুইজারল্যান্ডে ফিরে যাবেন তাঁরা।

লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের চট্টগ্রাম জেলা গভর্নর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, মাইক ও ফেরেল এই বিশেষ বার্তা নিয়ে কাজ করছেন যে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা মানুষকে নিঃশেষ করে দিতে পারে না। চেষ্টা, ইচ্ছাশক্তি ও একাগ্রতা তাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়।