নারায়ণগঞ্জ ছাড়ার হুমকি ধানের শীষ প্রার্থীকে

নির্বাচন ঘনিয়ে এল। প্রার্থীদের প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী মামলা, গ্রেপ্তার, হুমকি—এসব সামলাতেই কূল পাচ্ছেন না। তাঁর বড় ভাই হাজি মোক্তার হোসেনকে গতকাল সোমবার দুপুরে নাশকতার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে ফতুল্লা থানার পুলিশ। এর কিছুক্ষণ পরেই প্রার্থী কাসেমীকে নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। হুমকিদাতা আওয়ামী লীগের লোকজন। এ বিষয়ে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি। আর সেই সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের পাঁচতলা থেকে নামার পরই জেলা বিএনপির সহসভাপতি আইনজীবী পারভেজ আহমেদকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।

পারভেজ সংবাদ সম্মেলনের সময় মুফতি কাসেমীর পাশেই ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন করে বাড়ি ফেরার সময় নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন পারভেজ। তাঁর সেই শঙ্কাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস্তবে রূপ দেয় পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে কাসেমীর প্রধান প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমান। কাসেমী বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। এর আগেও প্রচারণায় বাধার অভিযোগ করেছিলেন এই প্রার্থী।

সংবাদ সম্মেলনের আগে মুঠোফোনে মুনির হোসাইন কাসেমী এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তিনি মাদানীনগর মাদ্রাসা থেকে গাড়িতে করে নারায়ণগঞ্জে আসছিলেন। পথে পরিচিত একজন ফোন করে দেখা করতে চান। বেলা পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে রূপায়ণ টাউনের ফটকে গাড়ি থামিয়ে তিনি পরিচিত ওই লোকের সঙ্গে গাড়ির ভেতরে বসে কথা বলছিলেন। এ সময় চার–পাঁচটি মাইক্রোবাস এসে তাঁর গাড়ির সামনে-পেছনে দাঁড়ায়। ২০-২২ জন লোক তাঁকে ঘিরে ধরেন। তখন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম এসে তাঁকে বলেন, ‘কী রে, তুই জঙ্গি মুনির না? আধা ঘণ্টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ শহর না ছাড়লে তোকে জানে মারে ফেলব। অন্য কথা বুঝি না।’ এ সময় পেছন থেকে আরেকজন এসে তাঁর জামার কলার চেপে ধরেন।

এরপর সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও অভিযোগ করেন, ওই ঘটনার সময় শাহ নিজামের সঙ্গে থাকা চার থেকে পাঁচজন যুবক অস্ত্রও দেখান। আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নিজাম বেশ কয়েকবার তাঁকে নারায়ণগঞ্জ না ছাড়লে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

এর আগে প্রার্থী মুনির হোসাইন কাসেমী প্রথম আলোকে বলেন, ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নিজামের সঙ্গে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকুও ছিলেন। শওকত হাসেম বিএনপির নেতা হলেও নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাঁকে একটি বিশেষ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই চেনে। বিষয়টি তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছন বলে জানান।

তবে প্রার্থী মুনির হোসাইন কাসেমীকে আটকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শাহ নিজাম ও শওকত দুজনই।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপি নেতা শওকত হাসেম বলেন, ‘আমি মুনির কাসেমীকে চিনি না। তিনিও নিশ্চয়ই আমাকে চেনেন না। আর যে সময় ওই ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, সে সময় আমি বাসাতেই ছিলাম।’

আর আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নিজাম বলেন, ‘প্রথমত, আমি তাঁকে চিনি না। তা ছাড়া আমি ও শওকত দুজন একসঙ্গে মিলে ধানের শীষের প্রার্থীকে হুমকি দেওয়ার কোনো কারণই নেই। কারণ, শওকত বিএনপি করেন।’

কাসেমীর অভিযোগ প্রসঙ্গে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের বলেন, কাসেমীকে হুমকি দেওয়ার কোনো অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপি পারভেজকে তুলে নেওয়ার বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল সেনাবাহিনী নামলে মাঠ কিছুটা সমতল হবে। কিন্তু আজ যা হলো তা দুঃখজনক। তবু সেনাবাহিনীর ওপর থেকে আমরা আস্থা হারাচ্ছি না।’

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ)