বাবার প্রচারণায় হত্যা মামলার আসামি ছেলেসহ সহযোগীরা

বাবার প্রচারণায় বক্তব্য দিচ্ছেন ফারুক হত্যা মামলার পলাতক আসামি সহিদুর রহমান খান। সম্প্রতি কদমতলী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।  প্রথম আলো
বাবার প্রচারণায় বক্তব্য দিচ্ছেন ফারুক হত্যা মামলার পলাতক আসামি সহিদুর রহমান খান। সম্প্রতি কদমতলী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। প্রথম আলো

টাঙ্গাইল–৩ আসনের (ঘাটাইল) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান খানের নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন তাঁর ছেলে সহিদুর রহমান খান (মুক্তি) ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁরা টাঙ্গাইলের বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি। হত্যা মামলার আসামিদের উপস্থিতির কারণে বিব্রত হচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। আর বিএনপি বলছে, চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এলাকায় অবস্থান করলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না।

এই আসনের সাংসদ আমানুর রহমান খান ফারুক হত্যা মামলায় দুই বছরের অধিক সময় ধরে কারাগারে আছেন। এবার এ আসনে তাঁকে মনোনয়ন না দিয়ে তাঁর বাবা আতাউর রহমান খানকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আমানুরের অন্য তিন ভাইও ফারুক হত্যা মামলার আসামি। তাঁরা চার বছর ধরে পলাতক রয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী লুৎফর রহমান খান (আজাদ) অভিযোগ করেন, চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পরও আতাউর রহমান খানের দুই ছেলে সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও জাহিদুর রহমান খান কাকন তাঁদের বাহিনী নিয়ে নির্বিঘ্নে ঘাটাইলে নৌকার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করছে না। বিভিন্ন স্থানে সহিদুরের নেতৃত্বে ধানের শীষের নির্বাচনী অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিনে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সন্ত্রাসীরা আর রাতে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধানের শীষের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, সহসভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, মহিলা দলের সভানেত্রী নিলুফার খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ফারুক হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলায় পলাতক আসামি সহিদুর রহমান খান ১০ ডিসেম্বর ঘাটাইলে এসেছেন। তাঁর সহযোগী ফারুক হত্যা মামলার পলাতক আসামি আলমগীর হোসেন ওরফে চান ও ছানোয়ার হোসেনও রয়েছেন। ১৩ ডিসেম্বর ঘাটাইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অংশ নেন। সে সমাবেশে সহিদুর বক্তব্য দেন।

নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী ও এই মামলার বাদী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহার আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমার স্বামী বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী ফারুক হত্যার বিচার আমি অবশ্যই পাব।’

জানতে চাইলে ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ওরফে লেবু বলেন, ‘আমরা নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছি। সহিদুর রহমান খান মুক্তিও তাঁর বাবার পক্ষে কাজ করছেন। তবে তিনি জামিনে আছেন কি না সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’ সহিদুরের সঙ্গে একাধিক নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদ বলেন, এ ব্যাপারে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত করে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য তিনি ঘাটাইল থানার ওসির কাছে পাঠিয়েছেন।