সিলেটে আয়েশে আ.লীগ, আতঙ্কে বিএনপি

পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে আছে শহর-গ্রাম। নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙ্গল থেকে শুরু করে কমবেশি সব প্রতীকের পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলছে সিলেটের ছয়টি নির্বাচনী এলাকায়। সেখানে পাল্লা দিয়ে চলছে মাইকিং। কাকডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা গণসংযোগ-পথসভাও করছেন। এসব ছাপিয়েও বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের কপালে চিন্তার রেখা। গ্রেপ্তার এড়াতে রাতের বেলা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে আয়েশে প্রচারণায় আছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

ভোটের রাজনীতিতে এমন চিত্র সিলেটের। এর আগে কোনো সংসদ নির্বাচনে এমন দৃশ্যপট ছিল না বলেই স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, অতীতে কখনোই বিরোধী পক্ষের নেতা-কর্মীদের পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়নি। দেশের অন্যত্র যত খারাপ নির্বাচনই হোক না কেন, সিলেটে সব সময় সব দল সমানভাবে প্রচারে অংশ নিয়েছে। প্রার্থীরাও বাধাহীনভাবে আরাম-আয়েশে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেছে। পুলিশ বেছে বেছে বিএনপির সম্ভাব্য এজেন্ট ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ভয়ভীতিও দেখাচ্ছে।

বিএনপির জেলা ও মহানগরের কয়েকজন প্রথম সারির নেতা জানিয়েছেন, পুলিশকে দিয়ে সরকার বিএনপি, জামায়াতসহ ঐক্যফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত শরিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নানামুখী ব্যবস্থা নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ প্রচারণায়ও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে রাতের বেলা বিএনপিপন্থী ব্যক্তিদের বাসায় গিয়ে পরিবারের নারী সদস্যদের ভয় দেখিয়ে তাঁদের স্বামী-সন্তানদের ৩০ ডিসেম্বর এলাকা ছাড়তেও নির্দেশনা দিচ্ছে।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘সম্প্রীতির অঞ্চল সিলেটে অসম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়েছে পুলিশ। এখন আর নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে হচ্ছে না। কারণ পুলিশ এখন বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে। মনে হচ্ছে, আমরা যেন পুলিশের বিপক্ষেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। গত দুই দিনের ব্যবধানে জেলায় ১০টির মতো মামলা হয়েছে। এতে ৫০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া রাতের বেলা পুলিশ বাড়িঘরে গিয়ে নির্যাতনের পাশাপাশি ভয়ভীতিও দেখাচ্ছে।’

সিলেট-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর গত সোমবার এবং গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট-৬ আসনের (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) বিএনপির প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী সিলেট নগরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে দলের নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগ করেছেন। মুক্তাদীর বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতেই পুলিশ অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ফয়সল জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকে তাঁর অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছে এজেন্টদের তালিকা খুঁজছে বলেও অভিযোগ করেছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ছয়টি আসনে মোট ভোটার ২২ লাখ ৫২ হাজার ২৯৪ জন। মোট ভোটকক্ষ ৪ হাজার ৮৬৩টি। এর মধ্যে স্থায়ী ৪ হাজার ৬৬৩টি এবং অস্থায়ী ২১৩টি। মোট প্রার্থী ৪৩ জন। আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থীরা জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারকে কুলষিত করতেই বিএনপি পুলিশ ও সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্য অভিযোগ এনেছে। বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের অভিযোগ, ভোট ডাকাতি করতেই আওয়ামী পুলিশকে দিয়ে গায়েবি মামলা করে নেতা–কর্মীদের হয়রানি করছে।

গায়েবি মামলা ও ধরপাকড় বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান গতকাল বিকেলে বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় থাকায় তিনি সেই মুহূর্তে কথা বলতে পারছেন না। তবে গত সোমবার সন্ধ্যায় মহানগরের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকেই হয়রানি করা হচ্ছে না। বিএনপির প্রার্থীদের অভিযোগ সত্য নয়।

সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, লিখিতভাবে কোনো প্রার্থীই এমন অভিযোগ করেননি। তবে মৌখিকভাবে এক-দুজন এমন অভিযোগ করেছেন। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।