'শেষবারের মতো ভোট চাইছি'

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

সেই কাকডাকা ভোরে যাত্রা শুরু। বাসায় ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত। এ সময়ের মধ্যে এ–গ্রাম থেকে ও–গ্রামে চষে বেড়াচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। উঠান বৈঠক, পথসভা আর সমাবেশে আবেগঘন বক্তৃতা দিচ্ছেন। জানাচ্ছেন, এটাই হয়তো তাঁর জীবনের শেষ নির্বাচন। নারী, পুরুষ আর তরুণ-তরুণীদের কাছে তাই শেষবারের মতো চাইছেন ভোট। এলাকার প্রবীণ মানুষেরাও তাঁকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করছেন। ১৫ দিন ধরে মোটামুটি এটাই শিক্ষামন্ত্রীর দৈনন্দিন রুটিন।

নুরুল ইসলাম নাহিদ সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। টানা ১০ বছর ধরে তিনি এ আসনের সাংসদ। এবার শেষবারের মতো নির্বাচন করছেন বলে গণসংযোগের সময় তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের ভোটারদের বলছেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

প্রচারে শিক্ষামন্ত্রী সবার কাছে অনুরোধ করছেন এভাবে: ‘এবার শেষবারের মতো আপনাদের কাছে ভোট চাইছি। বৃদ্ধ বয়সী ব্যক্তিকে নিশ্চয়ই আপনারা বিমুখ করবেন না।’ গণসংযোগে তিনি এও বলছেন, আওয়ামী লীগ আর উন্নয়ন একসূত্রে গাঁথা। নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়া মানেই নিজেদের এলাকার উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

গতকাল বুধবার শিক্ষামন্ত্রী গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। সকালে গোলাপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে উঠান বৈঠকে যোগ দেন। পরে তিনি ইউনিয়নটির চৌঘরী উত্তর গোয়াসপুর ও গোয়াসপুর বাজারে আয়োজিত পথসভায় যোগ দেন। এরপর রায়গড়, রানাপিং, শেরপুর এলাকায় নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রচার চালান। সেখান থেকে তিনি যান গোলাপগঞ্জ পৌরসভায়। সেখানে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ করেছেন। পরে বিকেলের দিকে উপজেলার আরও বেশ কিছু গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রীর পেছনে পেছনে দলের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও সাধারণ মানুষের জনস্রোত ছিল।

পথসভা ও প্রচার চলাকালে শিক্ষামন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে তিনি বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। পুনর্বার নির্বাচিত হলে তিনি পরিকল্পনামাফিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ করে দুটি উপজেলাকে সারা দেশের মধ্যে একটি আদর্শ উপজেলা হিসেবে পরিচিতি তৈরিতে সব ধরনের ভূমিকা রাখবেন। উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে শেখ হাসিনাকে পুনরায় দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট চান।

গতকাল বেলা তিনটায় বিয়ানীবাজার পৌরশহরে নুরুল ইসলাম নাহিদের সমর্থনে উপজেলা, কলেজ ও পৌর শাখা ছাত্রলীগের (স্বাধীন গ্রুপ) উদ্যোগে এক বিশাল প্রচার মিছিল হয়েছে। এটি নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এর আগে পৌর শহরের পোস্ট অফিস রোড পয়েন্টে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ–সংগঠনের উদ্যোগে এক পথসভা হয়। এতে বক্তারা বলেন, ভদ্র, মার্জিত ও রুচিবোধসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে নুরুল ইসলাম নাহিদের গ্রহণযোগ্যতা দেশব্যাপী। একজন সফল শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও তাঁকে দেশের মানুষ অভিহিত করে থাকেন। তাই এলাকাবাসীর স্বার্থেই এ রকম একজন কৃতী ব্যক্তিকে পুনরায় নির্বাচিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।

সিলেট-৬ আসনে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়া আরও চারজন প্রার্থী রয়েছেন। তবে এর মধ্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সমসের মবিন চৌধুরী (কুলা) সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন বিএনপির ফয়সল আহমদ চৌধুরী (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আজমল হোসেন (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া (মোটরগাড়ি)। এলাকাবাসীর ভাষ্য, আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিএনপির ফয়সল আহমদ চৌধুরীর মধ্যেই শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

আসনটির মোট ভোটার ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৩ জন এবং নারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৪ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯০টি। মোট ভোট কক্ষ ৮৮৭টি। এর মধ্যে স্থায়ী ৮৫৬টি ও অস্থায়ী ৩১টি। সিলেটের জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা এম কাজী এমদাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে যেন প্রচার চালান, সেটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি।’