আ.লীগ ফুরফুরে, উদ্বেগ বিএনপিতে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা গতকাল শুক্রবার সকালে শেষ হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম বিএনপির ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীরা তিন দিন আগেই প্রচারণা শেষ করেন। গত বৃহস্পতিবার বিএনপি ও ২০–দলীয় জোটের সাতজন প্রার্থী মাঠে ছিলেন। সেই তুলনায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ১৬ প্রার্থীই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ান।

প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ও যোগাযোগ করে জানা গেছে, ধানের শীষের একাধিক প্রার্থী গতকাল নানা অভিযোগ তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা গতকাল নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে সময় কাটান। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রায় সব প্রার্থীকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। আর বিএনপির প্রার্থীদের কারও কারও চেহারায় ছিল বিষণ্নতার ছাপ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম–১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশাররফ হোসেন গতকাল মিরসরাইয়ের গ্রামের বাড়িতে নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। তাঁকে সারাক্ষণ ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা এক মাস এলাকায় পড়ে আছি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গণসংযোগ করেছি। এখন একটু রিলাক্সে (নির্ভার) আছি।’

অন্যদিকে গতকাল সকালে মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রকল্প–সংলগ্ন বিএনপির প্রার্থী নুরুল আমিনের গণসংযোগে হামলা হয়েছে বলে তিনি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন।

এদিকে চট্টগ্রাম–১১ (পতেঙ্গা–বন্দর) আসনে বিএনপির প্রার্থী আমীর খসরু গতকাল দিনভর চট্টগ্রাম নগরের মেহেদীবাগের বাসায় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। বেলা তিনটায় তিনি চট্টগ্রাম–৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের বাদশা মিয়া সড়কের বাসায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। ঘণ্টাখানেক থেকে তিনি আবার মেহেদীবাগের বাসায় ফিরে যান। তিনি আত্মবিশ্বাসী, ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে বিএনপির জয় ঠেকানো যাবে না। একই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ লতিফ দিনভর নিজ বাড়িতে সময় কাটান।

চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–হালিশহর–খুলশী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রাথী আফছারুল আমীন কাট্টলীর পারিবারিক মসজিদে গতকাল জুমার নামাজ আদায় করেন। জুমার পর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় দেওয়ানহাটে চলে যান তিনি। সেখানে তিনি নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। আফছারুল বলেন, প্রচারণা বন্ধ। নেতা–কর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী কার্যালয়ে সময় কাটাতে সমস্যা নেই।

চট্টগ্রাম–১০ আসনের বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান নগরের ভিআইপি টাওয়ারের বাসায় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন। তবে তাঁকে উদ্বিগ্ন দেখা গেছে। কারণ, বাধার কারণে তিনি গণসংযোগ শেষ করতে পারেননি। নোমান বলেন, ‘নির্বিঘ্নে নির্বাচনী এজেন্ট ভেতরে যেতে পারা নিয়ে একটু চিন্তিত। এ ছাড়া নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ হয়নি। আর ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলেই আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলব।’

চট্টগ্রাম–৭ (রাঙ্গুনিয়া) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাছান মাহমুদ গতকাল দিনভর রাঙ্গুনিয়ায় সময় কাটান। বিকেলে নগরের বাসায় ফিরে আসেন। আবার রাতে তাঁর রাঙ্গুনিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রচারণা শেষ করেছি। এলাকার মানুষ ৩০ ডিসেম্বর ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।’

অন্যদিকে দলীয় নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে এ আসনে ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী নুরুল আলমকে গতকাল উদ্বিগ্ন দেখা গেছে। গতকাল তিনি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, প্রচারণা শুরুর দিন থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০–দলীয় জোটের ৪০ নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ অবস্থায় নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল দিনভর গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। জুমার নামাজ পড়ার জন্য তিনি বাড়ি থেকে বের হন। দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি সময় পার করেন। জাফরুল বলেন, ‘এজেন্ট ঠিক করেছি। কিন্তু পুলিশের আচরণ কেমন হবে তা পর্যবেক্ষণ করছি।’

গতকাল চট্টগ্রাম–১৬ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীও নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন।

চট্টগ্রামে নৌকার অন্য প্রার্থীরাও গতকাল ফুরফুরে মেজাজে সময় কাটিয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু বিএনপির প্রার্থীরা এজেন্ট দেওয়া নিয়ে এবং গ্রেপ্তার–হয়রানি আরও বাড়বে কি না, এসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। যদিও ১৬টি আসনে বিএনপি ও জোটের তিন প্রার্থী কারাগারে।