গৌরীপুরে ভোটারদের মনে ভয়

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া বাজার। গতকাল শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে সেখানকার একটি চায়ের দোকানে ঢোকা হলো। দোকানে তখন দোকানি ছাড়া আরেকজন ছিলেন। চা পান করতে করতে সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি জানতে চাইলে দোকানি নজরুল ইসলাম অপরিচিত ভেবে চুপ করে রইলেন। অন্যজন হেসে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চিন্তা করে দোকানি বললেন, ‘আসলে সত্য কথার ভাত নাই।’ সেই ‘সত্য কথা’ তিনি বললেন না।

ওই দোকান থেকে বেরিয়ে গৌরীপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। গৌরীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৩ আসন। নির্বাচন পরিস্থিতি জানতে চাইলে তাঁরাও চুপ রইলেন বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কেউই মন খুলে কথা বলতে চাইলেন না। তাঁদের অনেকের মনে একধরনের ভয়। তবে গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একজন বয়স্ক ব্যক্তি বললেন, ‘বাইরে তো শুধু নৌকার সাউন্ড (আওয়াজ) শোনা যায়।’

ভোটারদের মধ্যে এই ভয়ের বিষয়টি তুললে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফারহানা করিম প্রথম আলোকে বলেন, ভয়ের কোনো কারণ আছে বলে তিনি মনে করেন না। ভোটাররা যাঁর যাঁর ভোট দেবেন।

ময়মনসিংহ–৩ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৮৮ জন। ৮৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ নাজিম উদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির প্রার্থী প্রকৌশলী এম ইকবাল হোসেইন। অন্য প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির হারুন আল বারী, জাকের পার্টির গোলাম মোহাম্মদ, ইসলামী আন্দোলনের আইয়ুব আলী এবং তরীকত ফেডারেশনের প্রাণেশ চন্দ্র পণ্ডিত। ভোটাররা বলছেন, মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যেই।

বিএনপির প্রার্থী ইকবাল হোসেইন প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে তিনিই জিতবেন। কিন্তু ফল তুলে আনতে পারবেন কি না, সেটাই তাঁর সন্দেহ। তিনি শুনেছেন তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাঁর পক্ষে কাজ করার জন্য। এত দিন তাঁর গণসংযোগে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সরাসরি তাঁর গাড়িতে হামলা করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ প্রার্থী জিততে পারবেন না ভেবে এখন ভোটারদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে যেন ভোটকেন্দ্রে না যান। তাঁর সম্ভাব্য এজেন্টদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনজন এজেন্ট ভয়ে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এসব কারণে কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়া নিয়েও তিনি কিছুটা সংকটে পড়েছেন।

ইকবাল হোসেইন আরও বলেন, ইতিমধ্যে আটটি মামলায় তাঁদের পাঁচ শতাধিক কর্মী–সমর্থককে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জনের মতো। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও সমাধান পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই মানবেন।

বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও বলেন, বিএনপি প্রার্থী দুটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। দুটিই নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।

আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আহমেদ বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ নাকচ করে প্রথম আলোকে বলেন, মূলত বিএনপি প্রার্থীর প্রচার–প্রচারণা চালানোর মতো প্রয়োজনীয় লোকজন নেই। এজেন্টদের হুমকি দেওয়া ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার অভিযোগও সত্য নয়। তিনি আশা করেন, নির্বাচনে তিনিই জিতবেন।

আলাপকালে কয়েকজন ভোটার বলেন, তাঁরা চান যেন ঠিকমতো ভোট দিতে পারেন। কিন্তু সে বিষয়ে খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না।

গৌরীপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ময়মনসিংহ শহরে ফেরার সময় নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গৌরীপুরের বোকাইনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা অটোরিকশাচালক বললেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করে লাভ কি? সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তো দেখা যাচ্ছে না।