ধার আর দান থেকে মিটবে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়

>

সিলেটে বেশির ভাগ প্রার্থীই ধারদেনার টাকা দিয়ে নির্বাচন করবেন। নিজের আয় থেকে ব্যয় করা প্রার্থীও আছেন।

সিলেটের ছয়টি আসনে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে সাতজনই নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন প্রবাসীসহ দেশে থাকা আত্মীয়স্বজন আর অনাত্মীয়দের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দানের টাকায়। দুজন আবার ধার পাচ্ছেন ছেলে ও মেয়ের কাছ থেকে। আবার একজন প্রার্থী রয়েছেন, যিনি নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে স্ত্রীর কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ‘দান’ পেয়েছেন।

প্রার্থীদের হলফনামার সঙ্গে দাখিল করা ‘ফরম-২০’ অংশে ‘নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী’ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

হলফনামায় দেখা গেছে, সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন ২৪ লাখ টাকা। পুরো টাকাই তিনি খরচ করবেন নিজ আয় থেকে পাওয়া অর্থে। এ আসনের বিএনপির প্রার্থী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর ২৫ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করবেন। বাকি ১৫ লাখ টাকা কানাডাপ্রবাসী বোন মালিকা আক্তারের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান হিসেবে পাবেন।

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান নির্বাচনে ১৫ লাখ টাকা খরচ করবেন। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা প্রবাসে ব্যবসা থেকে পাওয়া এবং বাকি ১০ লাখ টাকা ফুপাতো ভাইয়ের কাছ থেকে ধার বা কর্জ হিসেবে নিয়েছেন। একই আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাংসদ মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী। তিনি নির্বাচনী ব্যয়ের ১৬ লাখ টাকার মধ্যে নিজের আয় থেকে খরচ করবেন ১২ লাখ টাকা। সালমান চৌধুরী নামের এক ভাইয়ের কাছ থেকে ধার নেবেন দুই লাখ টাকা। আল-মাহাদী চৌধুরী নামের এক ভাইয়ের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান হিসেবে পাবেন দুই লাখ টাকা। ওই দুই ভাইয়ের আয়ের উৎসের স্থলে লেখা রয়েছে ‘প্রবাসী’।

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ২৫ লাখ টাকা খরচ করবেন। এ পুরো টাকাই তিনি পেয়েছেন নিজের আয় ও ব্যবসা থেকে। বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরীও ২৫ লাখ টাকা খরচ করবেন। তিনি নিজের ব্যবসা থেকে পুরো টাকা পেয়েছেন।

সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ ইমরান আহমদ ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সম্ভাব্য খরচ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা থেকে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং স্ত্রী নাসরিন আহমাদের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান হিসেবে প্রাপ্ত ৫ লাখ টাকা খরচ করবেন। বাকি টাকার মধ্যে আত্মীয়স্বজন ছাড়া তিনজনের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান হিসেবে পাবেন ৭ লাখ টাকা।

বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম নির্বাচনে সম্ভাব্য খরচ দেখিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে নিজের আয় থেকে পাওয়া ২০ লাখ টাকা খরচ করবেন। এর বাইরে প্রবাসী ভাই মুরাদ চৌধুরী ও ছেলে নাঈম চৌধুরীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে ধার হিসেবে নেবেন।

সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি উবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়েছেন ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকার উৎস তাঁর বেতন ও কৃষি। বাকি টাকার মধ্যে লন্ডনপ্রবাসী মেয়ে মাছুমা আখতারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ এবং দুবাইপ্রবাসী ভাইয়ের ছেলে মারুফের কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা ধার নেবেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। নিজের আয়ের পাঁচ লাখ টাকার পাশাপাশি মেয়ে রানা লায়লা হাফিজের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং ভাগনে ওবায়দুর রবের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধার নিয়ে ব্যয় করবেন। আত্মীয়স্বজন ছাড়া অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে ধার হিসেবে নিয়েছেন আরও পাঁচ লাখ টাকা।