ভোটারদের এখন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ

>

ধানের শীষের প্রার্থীরা মনে করছেন, ভোটাররা একবার কেন্দ্রে যেতে পারলে তাঁরাই বিজয়ী হবেন।

সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন খুলনার ছয়টি আসনের ধানের শীষের প্রার্থীরা। তাঁদের ধারণা, ভোটাররা যদি নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, তাহলে বিএনপির বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

ধানের শীষের প্রার্থীরা আরও মনে করছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের কিছু কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ কারণে তাঁরা সরকার পরিবর্তন করার পক্ষে। ভোটাররা এখন চুপচাপ আছেন। যদি তাঁরা কেন্দ্রে যেতে পারেন, তাহলে ধানের শীষেই ভোট দেবেন।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী নামার পর ভোটারদের মধ্যে ভীতির ভাব দূর হবে বলে মনে করছিলেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। কিন্তু সেনাবাহিনী নামার পরও ধানের শীষের কর্মী–সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অভিযান ও ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত থাকায় তাঁদের সেই আশা আর থাকছে না। এখন ভোটারদের কীভাবে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই ছকই আঁকছেন প্রার্থীরা।

খুলনা-২ আসনে (সদর-সোনাডাঙ্গা) বিএনপি প্রার্থী হয়েছেন নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি গত মে মাসে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনেও বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে তিনি ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট পেয়েছিলেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক পান ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট। সিটি নির্বাচনের পর বিএনপির প্রার্থী বিভিন্ন সময়ে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে বলেছেন, সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পযন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে যদি এক লাখের বেশি ভোট ধানের শীষে পড়ে, তাহলে পুরো সময় সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হতেন।

সিটি নির্বাচনে নজরুল ইসলামের ১ লাখের বেশি ভোট পাওয়ায় ভোটারদের ব্যাপারে আরও বেশি আশাবাদী হয়ে পড়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। ভোটাররা তাঁদের পক্ষেই আছেন বলে মনে করছেন তাঁরা। যেকোনো মূল্যে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াটাই এখন তাঁরা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। এ জন্য প্রার্থীরা নিজের ভোট চাওয়ার পরিবর্তে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ভোটারদের উৎসাহিত করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন নজরুল ইসলাম। ওই ব্রিফিংয়ে তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গেছেন। এখন ভোটারদের দায়িত্ব হচ্ছে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া। আর তাই ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার অনুরোধ করেন তিনি। এবার নির্বাচনে জনগণ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট দেওয়া নিয়েও বড় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রার্থীদের। একের পর এক এজেন্ট গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রতিটি কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছে বিএনপি।

খুলনা-১ আসনের (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) ধানের শীষের প্রার্থী হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান। ওই আসন থেকে গত কয়েকবার তিনি বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু জয়লাভ করতে পারেননি। এবার ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোটে বিজয়ী হবেন বলে তিনি মনে করছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকায়, প্রতিটি পাড়ায় পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। সমর্থক ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য বলে আসছে। এতে সাধারণ ভোটাররা ভীত হয়ে পড়েছেন। ভোটের দিন পরিবেশ যদি ভালো হয়, তাহলে দুপুরের দিকে ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন বলে মনে হচ্ছে।

খুলনা-৪ আসনে (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। তিনি প্রচার–প্রচারণার শুরু থেকেই প্রতিদিন নেতা–কর্মীদের বিশাল বহর নিয়ে মাঠে ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সার্বিক পরিস্থিতি দেখে তিনিও আশাহত হচ্ছেন। আজিজুল বারী বলেন, প্রতিটি উপজেলার সব নেতা–কর্মীকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা বাড়িছাড়া করে ফেলেছে। এখন তিনি একা হয়ে পড়েছেন। যাঁদের ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তাঁরাও বাড়িছাড়া। এখন ভরসা ভোটাররা নিজেরাই। তাঁরা যদি স্বেচ্ছায় ভোটকেন্দ্রে যান, তাহলেই তিনি বিজয়ী হবেন।

খুলনা-৬ আসন থেকে (কয়রা-পাইকগাছা) ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন জামায়াতের খুলনা মহানগর আমির আবুল কালাম আজাদ। বর্তমানে তিনি কারাগারে। আসনটি বিএনপি–জামায়াতের আসন হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এবার ওই আসনের কোনো জায়গায় তেমন কোনো প্রচার–প্রচারণা করতে পারেনি তারা। নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার, সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতেও এখানে ধানের শীষের প্রার্থী জয়ী হবেন বলে মনে করছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। কয়রা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোমরেজুল ইসলাম বলেন, ভোটাররা চুপচাপ রয়েছেন। তেমন প্রচার না চালাতে পারলেও ভোটাররা ঠিকই ধানের শীষে ভোট দেবেন। এ জন্য ভোটারদের কীভাবে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যায়, সে কৌশল করছেন তাঁরা।