নাটকের শেষ অঙ্কে জয় শ্বশুর জিয়াউল মৃধার

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া গতকাল সংবাদ সম্মেলনে। সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে।  ছবি: প্রথম আলো
রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া গতকাল সংবাদ সম্মেলনে। সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে। ছবি: প্রথম আলো

নানা নাটকীয়তার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মহাজোটের মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন। এর ফলে জামাতার বদান্যতায় শেষ অঙ্কে জয় হলো শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধার। যদিও রেজাউলের প্রতীক ব্যালট পেপারে থাকবে। কারণ এখন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে ওই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে রেজাউল এ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ শ্বশুর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধাকে (সিংহ) সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন করবেন না বলে জানান। এ সময় সেখানে জিয়াউল হক উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘সরাইল-আশুগঞ্জে জামাই-শ্বশুরের মধ্যে একটা অপশক্তি কাজ করছে। সে অপশক্তি রোধ করতেই নিজে সরে দাঁড়িয়ে শ্বশুরকে সমর্থন জানিয়েছি।’

জিয়াউল হক জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ২০০৮ সালেও এ আসনে দলটি থেকে সাংসদ হন। কিন্তু এবার এ আসনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। এখানে দলটির মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের যুববিষয়ক উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম। রেজাউলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে জিয়াউলের লোকজন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। এরপরও রেজাউল মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় জিয়াউল বলেন, তিনি মারা গেলে রেজাউল যেন তাঁর জানাজায় না আসেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি পানি কাটলে দুই ভাগ হয় না, রক্ত কাটলেও দুই ভাগ হয় না। তাই পারিবারিকভাবে আমরা মিলিত হয়েছি। এ আসনে গভীর ষড়যন্ত্র ও নানা ধরনের ভানুমতীর খেলা চলেছে। সেই ভানুমতীর খেলার অবসান প্রয়োজন।’

নির্বাচন কার্যালয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জিয়াউল হক স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন তিনি জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার সই করা একটি চিঠি এনে নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেন। মসিউরও মহাজোটের প্রার্থী উল্লেখ করে জিয়াউলকে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেন। কিন্তু জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা রেজাউলকে লাঙ্গল ও জিয়াউলকে সিংহ প্রতীক বরাদ্দ দেন। লাঙ্গল প্রতীকের জন্য জিয়াউল উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেন। উচ্চ আদালত এ আবেদন খারিজ করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, এরপরও জিয়াউল নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণা চালান। এ অপরাধে জিয়াউলের এক সমর্থককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে আশুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি এলাকায় রেজাউলের স্ত্রী রওনক জাহান প্রচারণা চালাতে আসেন। তিনি বলেন, এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী তাঁর স্বামী রেজাউল ইসলাম। অন্য কেউ নন। এরপর গত বুধবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ দেশে ফেরার পর গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করলেন রেজাউল।

সংবাদ সম্মেলনে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে এ আসনে মহাজোটের পক্ষ থেকে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি এ আসনের মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এখানে একটা অপশক্তি কাজ করছে। সেই অপশক্তিকে ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে লোকজন আমাদের কাছে অনুরোধ করেছেন। পারিবারিক ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মনোনয়ন নিয়ে ওনার (জিয়াউল হক মৃধা) সঙ্গে আমার একটা কাল্পনিক বিরোধের সূত্রপাত হয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে, মনোনয়নের ক্ষেত্রে এটি ঘটতেই পারে।’