ভোট দিতে না পেরে মান্নার বোনের কান্না

বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার গ্রামটি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মান্নার নিজগ্রাম। গ্রামের নির্বাচনী কেন্দ্র বিহার মোহাম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়। আজ রোববার সকাল ১০টা। কেন্দ্রের সামনে অঝোর ধারায় কাঁদছেন বগুড়া ২ আসনের প্রার্থী মান্নার চাচাতো বোন রেবেকা বেগম। মান্নার আপন বোন রেহনুমা আহমদও এ সময় দাঁড়িয়ে।

রেবেকা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরছিলেন। কান্নার কারণ হচ্ছে তাঁকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলছিলেন, ‘চেয়ারম্যান শিখায়ে দিলো। আগ বাড়িয়ে আমাক বলছে, আপনি বাড়ি যান। ভোট দিতে দেয়নি। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’ চেয়ারম্যান মানে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম।

কেন্দ্রটিতে রয়েছেন ৩ হাজার ৫৬২ ভোটার। বেলা ১০টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ১৬৮টি ভোট পড়েছে বলে জানালেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা (কলেজ শিক্ষক) রওশন আলী। সে হিসেবে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

পুরো কেন্দ্রে ৭টি বুথ। কিন্তু একটিতেও মাহমুদুর রহমান মান্নার ধানের শীষ প্রতীকের কোনো এজেন্ট পাওয়া গেল না। রওশন আলীর জবাব, ‘লাঙল ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের পক্ষে কোনো এজেন্ট আসেননি।’

বিহার মোহাম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের লাগোয়া আরেকটি কেন্দ্র রয়েছে। এর নাম বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের ভোটার ৩ হাজার ৩৫২। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কলেজ শিক্ষক আবু তালেব জানান, দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৯০টি। এই কেন্দ্রের ৬ বুথের একটিতেও ধানের শীষের এজেন্ট নেই। তিনিও একই কথা বলেন, এজেন্ট আসেননি। বুথগুলো ঘুরে ঘুরে শুধু লাঙল প্রতীকের পক্ষের এজেন্টদের দেখতে পাওয়া যায়।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোটের লাঙলের প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। তাঁর পক্ষে কাজ করছেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম। মান্নার অন্য আত্মীয়-স্বজনও নিজেদের মতো করে ভোট দিতে পারেননি। মান্নার বোনের ছেলে সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে বলে যে প্রকাশ্যে লাঙলে ভোট দিতে। নইলে মাইর দেবে। আমি বললাম কেন প্রকাশ্যে ভোট দেব? আমি পরে ফেলে চলে এসেছি।’

কারা জোর করছিল-জানতে চাইলে সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘ওখানে চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে ছিল। পুলিশের এসআইয়ের কাছে বলেও কোনো লাভ হয়নি।’

মান্নার আত্মীয়দের মধ্যে শামসুন্নাহার বলেন, সামনে সিল মারার কথা বলায় তিনি কেন্দ্র থেকে ফিরে এসেছেন। শাহিদা বেগম ও সীমা বেগম বলেন, মগের মুল্লুক পেয়েছে। বলে যে লাঙলে ভোট না দিলে মাইর দেবে।

বিহার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেননি। কেন্দ্রের সামনেই তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়নি। তাঁরা নিজেরাই আসেনি ভয়ে। এটা ঠিক যে আমি থাকতে এখানে ধানের শীষে ভোট পড়তে পারে না।’

দুপুর ২টায় শহরের হোটেল নাজ গার্ডেনে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মাহমুদুর রহমান মান্না। এতে তিনি বলেন, এত বছর পর ভোট এসেছে, মানুষের মধ্যে ভোট দেওয়ার উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। কিন্তু জনগণ যাতে ভোট দিতে না পারে, সেজন্য অভিনব সব কৌশল অবলম্বন তৈরি করা হয়েছে।

ধানের শীষের এজেন্টরা কেন্দ্রে নেই কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ‘সব কেন্দ্রেই এজেন্ট ছিল। কিন্তু ভয় দেখিয়ে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটারদেরও কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ রকম প্রহসনের নির্বাচন হবে বুঝতে পারলে আমরা সংসদ নির্বাচনে আসতাম না।’