'ভোট দিবার পারি নাই'

শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাস ডিগ্রি কলেজে ভোট দিতে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভোট দিতে না পেরে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করেন তাঁরা। ছবি: আবদুস সালাম।
শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাস ডিগ্রি কলেজে ভোট দিতে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভোট দিতে না পেরে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করেন তাঁরা। ছবি: আবদুস সালাম।

শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাস ডিগ্রি কলেজে (ঢাকা-৮) কেন্দ্রে সকাল নয়টার দিকে একপাশে নারীরা আরেকপাশে পুরুষেরা ভোট দিচ্ছিলেন। এ সময় ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে ঘুরছিলেন কয়েকজন। তাঁরা অভিযোগ করছিলেন তাঁদের ভোটার নম্বর দেওয়ার কেউ নেই তাই ভোট দিতে পারছেন না। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা বাড়তে থাকল। ছোট জটলা থেকে বড় হতে লাগলে ভোট দিতে না পারা মানুষের সংখ্যা।

এই দলেই নিজের ভোটার কার্ড নিয়ে চিৎকার করছিলেন রোকেয়া কবির লাভলি নামের এক মধ্য বয়স্ক নারী। কাছে যেতেই চিৎকার করে বলা শুরু করলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। ভোট দিতে আসছি। কিন্তু ভোট দিতে পারি নাই। দুই ঘণ্টা ধরে এইখানে সেইখানে ঘুরতেছি। একজন বলে ভেতরে যান ভেতরে গেলে আরেকজন বলে বাইরে থেকে স্লিপ আনেন। বাইরে আসলে দেখি স্লিপ নাই। আমি এখন কার কাছে যাব। তাহলে কি ভোট দিতে পারব না? এর বিচার কে করবে?’ কথা বলার একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন রোকেয়া। কাঁদতে কাঁদতে তিনি চলে যান।

গণমাধ্যমের কর্মীদের দেখে অনেকের মতো এগিয়ে আসেন নারগিস আক্তার নামের আরেক নারী। তিনিও একই অভিযোগ করে বলেন, ভোট দিবার পারি নাই। প্রধানমন্ত্রী বলছেন সবাই ভোট দেবেন আমিও তাই ভোট দিতে আসলাম। এখন শুনি আমার ভোট কোথায় তা এখানকার লোকজন জানেন না।
এভাবে যখন কথা বলছিলেন নারগিস তখন প্রায় শতাধিক নারী ও পুরুষ কলেজের মাঠে ভোটার কার্ড উঁচিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য চিৎকার করছিলেন। একপর্যায়ে গণমাধ্যম কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তারা মাঠে সমবেত হন। শিহাব উদ্দিন ও আনোয়ারা বেগম এসেছিলেন এই কেন্দ্রে ভোট দিতে। ভোটার নম্বর জানতে না পেরে ভোট দিতে না পেরে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরতদের পেছনে পেছনে ধরনা দিতে থাকেন। একপর্যায়ে অধৈয্য হয়ে চিৎকার করতে থাকেন। বয়স জানতে চাইলে শিহাব উদ্দিন বলেন, আমার বয়স ৬০ বছর। এই জীবনে যতবার ভোট হইছে আমি দিছি। আর আজকো ভোট না দিয়া ফিরত যামু এ কেমন কথা? ভোট দিতে না পারলে এখানেই থাকমু দেখি কি হয়।

শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাস ডিগ্রি কলেজে ভোট দিতে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভোট দিতে না পেরে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করেন তাঁরা। ছবি: আবদুস সালাম।
শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাস ডিগ্রি কলেজে ভোট দিতে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভোট দিতে না পেরে প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করেন তাঁরা। ছবি: আবদুস সালাম।

এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সকালে ভোট শুরুর সময় কেন্দ্রের সামনে কিছু ব্যক্তি টেবিল চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন। তাঁরা ভোটারদের ভোটার নম্বরের স্লিপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু ঘণ্টা খানেকপর তাদের সেখান থেকে তুলে দেওয়া হয়। এতেই বিপাকে পড়েন সাধারণ ভোটাররা।
এখানে কথা হয় মো. বাচ্চু, তাজ উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁরাও ভোট দিতে এসে তাঁদের ভোটার নম্বর না পেয়ে ভোটার কার্ড দেখিয়ে প্রতিবাদ করছিলেন। একপর্যায়ে এই কেন্দ্রে আসেন এই আসনে বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও তাঁর স্ত্রী অফরোজা আব্বাস। তাঁরা দুজনই এই কেন্দ্রের ভোটার। তাঁদের সামনে পেয়ে অনেকে ভোট না দিতে পাররা অভিযোগ করছিলেন। এ সময় মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, আমাদের কর্মীরা ভোট দিতে পারছেন না। এই প্রতিবাদে আমরা ভোট দেব না। আমরা এভাবেই চলে যাচ্ছি। মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, আমাদের সমর্থকদের অনেকে ভোট দিতে এসে দেখেন ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। আমি চাই আমারও ভোটটা কেউ দিয়ে দিক। আমি ভোট না দিয়ে ফিরে যাচ্ছি। এটি প্রহসনের নির্বাচন অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, নির্বাচন কমিশন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। এই কমিশন বোবা ও কালা।

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার তুহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই কেন্দ্রের ভোটার ২২৭০ জন। যারা ভোটারদের স্লিপ দিচ্ছিলেন তাঁরা না থাকায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তারপরও আমরা ভোটারদের ভোটার নম্বর খুঁজে দিচ্ছি। কেউ ভোট না দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন এই অভিযোগ ঠিক নয়। তিনি যখন এসব কথা বলছিলেন তাঁর সামনেই ভোট দিতে না পারা ভোটাররা বিক্ষোভ করছিলেন।