অংশগ্রহণমূলক হওয়ায় বেশি ভোট পড়েছে

কাজী রিয়াজুল হক
কাজী রিয়াজুল হক

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার জন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। তবে দলীয় সরকারকে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রাক্‌–নির্বাচন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যাবলি পর্যালোচনা ও নির্বাচন–পরবর্তী মানবাধিকার সংরক্ষণে করণীয়—বিষয়ে এই সম্মেলনের আয়োজন করে কমিশন।

নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনে কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই নির্বাচন বড় কোনো সংঘাতময় নয়, বরং অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ায় বেশি শতাংশ ভোটও গণনা হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ভোট দেওয়া ছিল অংশগ্রহণমূলক।

রিয়াজুল হক বলেন, এবারের নির্বাচন উপলক্ষে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়। তাদের হটলাইন ১৬১০৮ নম্বর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত চালু ছিল। নির্বাচনের দিন সারা দেশে থেকে ৫২টি অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল—বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের যেতে বাধা দেওয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোটারদের বাড়ি গিয়ে ভোট দিতে না যাওয়ার হুমকি, লক্ষ্মীপুরের একটি নির্বাচনী এলাকায় বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া।

নির্বাচন–সংক্রান্ত অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘আমরা এসব অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে অবহিত করেছিলাম। দু-একটি কঠিন ঘটনা ঘটেছে। যেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাকে তদন্ত নিতে চিঠি দিয়েছি। এসব অভিযোগ পর্যবেক্ষণ করা হয়নি, আমরা এসব খতিয়ে দেখব।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে একটি দল নিয়ে ঢাকার ৬ থেকে ৭টি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সবগুলো ভোটকেন্দ্রতেই তিনি অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভোটকেন্দ্রগুলোয় বিরোধী দলগুলোর পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি কেন্দ্রে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট পেয়েছি। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে পাইনি। পোলিং এজেন্ট না থাকা, কেন্দ্রে প্রবেশের বাধার কারণ আমরা পর্যবেক্ষণ করব।’

ভোটাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কি না, জিজ্ঞেস করা হলে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটি দল বা প্রতীকের পক্ষে এত ভোট পড়ল। আর আরেকটি প্রতীকের পক্ষে কম ভোট পড়ল, এর কারণটা কী? এটা তো আমরা বলতে পারব না। এটা বলতে পারবে নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো। যেসব এলাকায় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ আছে, সেসব এলাকার লোকজন স্থানীয় প্রশাসন বা আমাদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানালে, আমাদের যতটুকু আইনগত ক্ষমতা আছে, সে অনুযায়ী তদন্ত করে দেখতে পারি।’

৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন মগবাজারের একটি কেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহের সময় দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন মানবজমিন পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কাফি কামাল এবং জিটিভির নিজস্ব প্রতিবেদক ফেরদৌস আরেফিন। এ ছাড়া যশোরে পাঁচজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহের সময় হামলায় গুরুতর জখম হন। সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি, এমন প্রশ্নে রিয়াজুল হক বলেন, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশের বাধা দেওয়ার ঘটনা তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে শুনেছেন। অনেক জায়গায় সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর কাছে অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

নির্বাচনের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর চরজুবলী ইউনিয়নের এক নারী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে কি না, রিয়াজুল হক বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো আমরা জানতে পেরেছি। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ করব, আমলে নেব।’