মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে, লড়াই করে ফিরলেন মাসুম!

সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের মুখে পড়েন মাসুম হাওলাদার (৩০)। এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন তিনি। ছবি: প্রথম আলো
সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের মুখে পড়েন মাসুম হাওলাদার (৩০)। এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন তিনি। ছবি: প্রথম আলো

সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের মুখে পড়েন মাসুম হাওলাদার (৩০)। কিন্তু আত্মসমর্পণ করেননি তিনি। উল্টো বাঘের সঙ্গে লড়াই করে ফিরিয়ে এনেছেন নিজের জীবন। এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মাসুম।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তাম্বুলবুনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ দিন সন্ধ্যার কিছু আগে আহত মাসুমকে উদ্ধার করে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফেরা মাসুম হাওলাদার বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের আব্দুল জলিল হাওলাদারের ছেলে। তিনি সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। মামুনের ভাই জাহিদুল হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার সকালে বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশন থেকে বনে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে নৌকায় করে সুন্দরবনের তাম্বলবুনিয়া খাল এলাকায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তাঁরা দুই ভাই। দুপুর দুইটার দিকে বড়শীর আধার সংগ্রহের জন্য তিনি খালে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন। ওই সময় মাসুম খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

জাহিদুল বলেন, বনের ভেতরে থাকা একটি বাঘ হঠাৎ পেছন থেকে মাসুমের ওপর আক্রমণ করে। বাঘটি তাঁর ডান পায়ে থাবা দেয়। মাসুম চিৎকার দিয়ে লাথি মারলে বাঘটি পা ছেড়ে হাতে থাবা দিয়ে টেনে তাঁকে বনের ভেতর নিয়ে যায়। পরে মাসুমের সঙ্গে বাঘটির ধস্তাধস্তি হয়।

প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ধস্তাধস্তি চলে জানিয়ে জাহিদুল বলেন, একপর্যায়ে তিনি চিৎকার শুরু করলে আশপাশের অন্য জেলেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ছুটে আসে। পরে মাসুমকে ছেড়ে বাঘ গভীর বনে ঢুকে যায়। বাঘের আক্রমণে গুরুতর আহত হয়েছেন মাসুম। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থান বাঘের নখ ও দাঁতের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়। পরে মাসুমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

জাহিদুলের দাবি, পূর্ণবয়স্ক বাঘটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট। বাঘটি কেয়াবনের মধ্য দিয়ে শ্যালা নদীর চরে এসে অপেক্ষা করছিল।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় তথ্য অনুয়ায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সুন্দরবনে ৩৫টি বাঘের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের হাতে ১০টি, লোকালয়ে ঢুকে পড়লে জনতার হাতে ১৪টি, বার্ধক্যজনিত কারণে ১০টি এবং ২০০৭ সালের সিডরে একটি বাঘ মারা যায়। এই সময়ে বাঘের পাল্টা আক্রমণে প্রায় ৩০০ জেলে, বাওয়ালি, মৌয়াল এবং গ্রামবাসী মারা গেছেন।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক অসীম কুমার সমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, বাঘের আক্রমণে আহত জেলে মাসুমকে বুধবার সন্ধ্যায় ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর বাম হাতে বাঘের নখের আঁচড় এবং ডান পায়ে দাঁতের কামড়ের চিহ্ন রয়েছে। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাসুম এখন শঙ্কামুক্ত।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, সুন্দরবনের ভেতরে যাওয়া জেলেদের নিরাপদে থেকে সংঘবদ্ধভাবে মাছ ধরতে বন বিভাগ থেকে সতর্ক করা হয়।