অ্যাপে চলা, অ্যাপে খাওয়া

>

• অ্যাপভিত্তিক হোম ডেলিভারি সেবার চাহিদা বাড়ছে
• ঢাকায় বেশ কয়েকটি অ্যাপভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান
• ঢাকায় নিবন্ধিত অ্যাপভিত্তিক ২০টি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান
• গৃহস্থালি থেকে শুরু করে অনেক সেবা নিমেষেই মেলে

কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন জুনায়েদ আজিম। কাজের ফাঁকে অফিসে বসেই সেরে নেন দুপুরের খাবার। অথচ কিছুদিন আগেও খাবার খেতে অফিসের বাইরে যেতে হতো তাঁকে। মুঠোফোনের একটি অ্যাপ তাঁর এই কাজ সহজ করে দিয়েছে। অর্ডার দিলে খাবার এখন অফিসে চলে আসে।

নভেম্বরে মিরপুর থেকে আজিমপুরে বাসা স্থানান্তর করেছেন রোকসানা আক্তার। নতুন বাসায় বৈদ্যুতিক কাজের জন্য মিস্ত্রি খোঁজার ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাঁকে। মিস্ত্রি মিলেছে মুঠোফোনের অ্যাপে।

জুনায়েদ ও রোকসানা বলেছেন, হোম ডেলিভারিভিত্তিক অ্যাপস ব্যবহার করে গৃহস্থালি থেকে শুরু করে অনেক সেবা নিমেষেই পাওয়া যায়।

শহরের যানজট, মানুষের ব্যস্ততা আর অল্প সময়ে সেবা পাওয়ার চাহিদা থাকায় গত কয়েক বছরে ঢাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি অ্যাপভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। গৃহস্থালির কাজ সারানো, মালামাল স্থানান্তর, বাসায় বা অফিসে খাবার পৌঁছানো, এমনকি রূপচর্চার সুবিধাও মিলছে অ্যাপগুলোতে।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্যানুযায়ী, শুধু ঢাকায় নিবন্ধিত অ্যাপভিত্তিক ২০টি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, অ্যাপেই সেবার বিভিন্ন ধরন, খরচ, ডেলিভারির সময়সহ বিস্তারিত দেওয়া থাকে। গ্রাহকেরা ঘরে বা অফিসে বসেই অর্ডার করতে পারেন। এতে খোঁজাখুঁজির ঝামেলা পোহাতে হয় না। আবার অ্যাপগুলোর সঙ্গে যুক্ত থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন।

অ্যাপের মাধ্যমে বাসার ফ্রিজ, এসি, বাথরুমের কল, ক্লিনার, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি, রেস্টুরেন্টের খাবার, লন্ড্রি, রূপচর্চাকারী থেকে গাড়ির চালক সরবরাহসহ ৮৬ ধরনের সেবা দেয় সেবা ডট এক্সওয়াইজেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ড অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন কর্মকর্তা বৃতি সাবরিন বলছেন, গ্রাহকেরা সুবিধা তো পাচ্ছেনই, পাশাপাশি মিস্ত্রিদেরও এখন পথে ঘুরে কাজ খুঁজতে হয় না। অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই তাঁদের গ্রাহক মিলছে, আয়ও বেড়েছে।

২০১৩ সালে ঢাকায় প্রথম অ্যাপভিত্তিক খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘হাংরি নাকি’। নিজেদের ২৫০ জন কর্মী দিয়ে বর্তমানে শুধু ঢাকায় ৯০০টি রেস্তোরাঁর খাবার সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইব্রাহীম বিন মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসে কাজ করার সময় নিজেদের খাওয়ার জন্য রেস্তোরাঁ থেকে ড্রাইভার বা অফিস সহকারীকে দিয়ে খাবার আনাতে হতো। সেখান থেকেই চিন্তা মাথায় আসে যে একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কীভাবে বাসায় বা অফিসে খাবার সরবরাহ করা যায়।’ তিনি বলেন, খাবার অর্ডার করা বেশির ভাগ গ্রাহকই তরুণ পেশাজীবী ও শিক্ষার্থী।

ধানমন্ডির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন মাহফুজ সালেকিন। যাতায়াতের ভোগান্তি এড়াতে বিভিন্ন সময় অ্যাপের মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহ করেন তিনি। ‘এই সেবায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি চলে আসে। অনলাইনেই পণ্যের দাম পরিশোধের পর যে ডেলিভারি চার্জ আসে, সেটিও অনেক কম থাকে। এ ছাড়া ছাড়ও দেয় প্রতিষ্ঠানগুলো।’ বলছিলেন মাহফুজ।

তরল ও পচনশীল দ্রব্য বাদে অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের কাজ করে ই-কুরিয়ার। ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান গ্রাহকসেবা কর্মকর্তা সানজিদা কামাল বলছেন, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকেরা অর্ডার করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা গ্রাহকের নির্ধারিত স্থান থেকে পণ্য নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেন। পণ্য গ্রহণ করার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ্যাপের সাহায্য নিতে হয়। সেখানে গ্রাহকের বিশেষ কোড দেওয়া থাকে। পণ্য পরিবহনে পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে বাইসাইকেল ব্যবহার করা হয়।

রাইড শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি উপহার, খাবার, কাগজপত্র সরবরাহের সেবা দেয় পাঠাও। এ ছাড়া ভাগো বিডি, ই-পোস্ট, বিদ্যুৎ, অ্যারামেক্স, পেপার ফ্লাই, শপ আপ, টিকটক, গোগো বাংলা, আই-এক্সপ্রেস, এনআরবি এক্সপ্রেস, সুন্দরবন, এসএ পরিবহন, কন্টিনেন্টাল, ডেলিভেরো, ই-ম্যান, স্টিড ফাস্ট কুরিয়ার নামের প্রতিষ্ঠানগুলোও রাজধানীতে হোম ডেলিভারি সেবায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।