ঘটনার সময় ক্লাসে, তবু আসামি

পটুয়াখালীর বাউফলের মো. হোজাইফা রহমান খান (১৮) ঢাকার মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজের সিভিল বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের নিয়মিত ছাত্র। গত ২৭ অক্টোবর তিনি ঢাকায় কলেজে ক্লাসে ছিলেন। অথচ ওই সময়ে বাউফলে ছাত্রলীগের এক নেতা হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। আর তাঁর স্বজনেরা আছেন দুশ্চিন্তায়।

হোজাইফা উপজেলার বীরপাশা গ্রামের বাসিন্দা এ কে এম মুজিবুর রহমান খানের ছেলে। এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববিরোধের জেরে গত ২৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাউফলের বীরপাশা গ্রামের আশুতোষ খাসকেলবাড়ির পূর্বপাশে সর্বজনীন পূজা মন্দিরের সামনে মো. মামুন গাজী নামের ছাত্রলীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ৩০ অক্টোবর নিহত মামুনের বাবা জি এম নজরুল ইসলাম ওরফে শাহজাহান গাজী ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করে বাউফল থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় চার নম্বর আসামি করা হয়েছে হোজাইফা রহমানকে।

নিহত মামুন গাজী উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

হোজাইফা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ঢাকায় কলেজে ছিলেন। তাঁকে হয়রানি করার জন্য আসামি করা হয়েছে।

হোজাইফা বলেন, ‘আমি যে কলেজে উপস্থিত ছিলাম তার প্রমাণ কলেজের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ও আমার স্যারেরা। আমি হয়রানি থেকে বাঁচতে চাই।’

সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. সাজ্জাদুল হক বলেন, ‘হোজাইফা ২৭ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত পরপর দুটি ক্লাসে উপস্থিত ছিল। এর আগেই হোজাইফা কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়। যা সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড রয়েছে।’

একই কলেজের ইনস্ট্রাক্টর সত্যজিৎ রয় বলেন, ‘ওই দিন সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ডিজাইন অব স্ট্রাকচার-২ বিষয়ের ক্লাস করাই। ওই সময় হোজাইফা রহমান ক্লাসে ছিল, যা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে সংরক্ষিত আছে।’ একই কলেজের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ওই দিন ১১টা ২০ মিনিট থেকে ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-২ বিষয়ের ক্লাস নিই। ওই সময় হোজাইফা রহমান ক্লাসে উপস্থিত ছিল।’

হোজাইফার বাবা এ কে এম মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কলেজে থেকেও হত্যা মামলার মিথ্যা আসামি হয়ে আমার একমাত্র সন্তান পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এটা যে কত কষ্টের, তা কাউকে বোঝানো যাবে না। এ নিয়ে আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি। আপনারা (সাংবাদিক) আমার ছেলেকে বাঁচান।’

পূর্ববিরোধের জের ধরে ওই মামলায় হোজাইফাকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান এ কে এম মুজিবুর রহমান। হোজাইফাকে মামলার আসামি করার কারণ জানতে চাইলে মামলার বাদী বলেন, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হত্যার সঙ্গে জড়িত না এমন কাউকে আসামি করা হলে তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে। তখন নির্দোষ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’