আখতারুজ্জামান উড়ালসড়ক টোলের আওতায় আসছে

নগরের আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কে চলাচল করছে ছোট-বড় যানবাহন। গতকাল বিকেল চারটায় শুলকবহর এলাকায়।  জুয়েল শীল
নগরের আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কে চলাচল করছে ছোট-বড় যানবাহন। গতকাল বিকেল চারটায় শুলকবহর এলাকায়। জুয়েল শীল

টোলের আওতায় আসছে চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব পাঠাচ্ছে উড়ালসড়ক নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সংস্থাটির ভাষ্য, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা জোরদার ও মাসিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

 সিডিএ সূত্র জানায়, মাসিক বিদ্যুৎ বিল, পরিচ্ছন্নতা, উড়ালসড়কের নিচে সড়ক বিভাজকে বাগান ও খুঁটির (পিলার) সবুজ সিনথেটিক টার্ফ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে এসেছে। কারণ, এই উড়ালসড়কে মোটরসাইকেলের প্রতিযোগিতাসহ লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে।  এ ছাড়া উল্টো পথে গাড়ি ওঠা এবং ৬০ থেকে ৭০ টন পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিপূর্বে একাধিক মোটরসাইকেল আরোহী দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

নগরের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫৪ ফুট চওড়া আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়ক নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৪৫৭ কোটি টাকা। এটি চালু হওয়ার পর নগরের জিইসি মোড়, ষোলশহর, দুই নম্বর গেট ও মুরাদপুর মোড়ে অসহনীয় যানজট কমে গেছে।

সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্লাইওভার (উড়ালসড়ক) চালু হওয়ার পর প্রতি মাসে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা কেবল বিদ্যুৎ বিল আসছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্য নিয়োগ করতে হবে। আর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ ধরেছি।’

আবদুচ ছালাম বলেন, ‘বিপুল অঙ্কের টাকার জোগান কোত্থেকে আসবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তাই টোল বসানোর বিষয়টি মাথায় এসেছে। কিন্তু আমরা চাইলে টোল বসাতে পারব না। আমরা প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিলে তা কার্যকর হবে।’

সিডিএর প্রকৌশলীরা জানান, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জোগান দিতে টোল বসানোর বিকল্প নেই। পরিকল্পনা কমিশন থেকে উড়ালসড়কগুলোতে টোল বসানোর একটি নির্দেশনা আছে। এতে সেবার মান আরও বাড়বে। নিরাপত্তা দেওয়া হলে উড়ালসড়কে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুরি, ভারী গাড়ি চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা যাবে। সার্বিক বিষয় দেখবেন নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যরা।’

টোল বসানোর বিরোধিতা করে পরিবহন বিশেষজ্ঞ সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়ার প্রশ্ন, ‘তাহলে এত বিপুল টাকা খরচ করে উড়ালসড়ক করা হলো কেন?’ তিনি বলেন, ‘উড়ালসড়কের রক্ষণাবেক্ষণের খরচের বোঝা জনগণের ওপর চাপালে আমি বলব এটি জনবান্ধব স্থাপনা নয়।’

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, উড়ালসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি ও অটোরিকশা সমানে চলাচল করছে। আবার কিছু পথচারী ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে উড়ালসড়ক পার হচ্ছিল।

উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ১৮ হাজার ছোট-বড় গাড়ি উড়ালসড়ক দিয়ে চলাচল করছে। প্রতিটি গাড়ির ওপর কমপক্ষে ১০ টাকা হারে টোল বসানো হলে রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিদ্যুৎ বিলের টাকা উঠে যাবে। তবে ভারী গাড়ির ওপর টোলের হার আরও অনেক বেশি হতে পারে, যাতে যাত্রী পারাপারে ছোট গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়।

সিডিএ সূত্র জানায়, উড়ালসড়কে ওঠার জায়গায় টোল ফটক করা হবে। নিয়মিত যাতায়াতের জন্য প্রিপেইড টোল কার্ড পদ্ধতি চালু হতে পারে। তবে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মিতব্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল থাকবে, যা প্রকল্প অনুমোদনের সময় বলে দেওয়া হয়েছে।