গৃহকর খাতে আয় কমেছে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গৃহকর আদায়ের হার তুলনামূলক কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৩ শতাংশ (৭৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা) গৃহকর আদায় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা কম। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় গৃহকর আদায়কারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে সংস্থাটি।

মূলত তিনটি কারণে এবার গৃহকর আদায়ের হার কম বলে জানান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, গত বছর গৃহকর নিয়ে আপিল শুনানি ছিল। এ জন্য অনেকেই পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করে আপিলে অংশ নিয়েছিলেন। আর বদলিজনিত কারণে কিছু সময়ের জন্য প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন না। এ ছাড়া সচরাচর বছরের শেষের দিকে গৃহকর আদায় হয় বেশি। কিন্তু এবার এই সময়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল। ফলে এটিও আদায় কম হওয়ার একটি কারণ।

সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) ৭৮ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আদায় হয়েছে, যা মোট দাবির মাত্র ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। সরকারি সংস্থাগুলো পরিশোধ করেছে ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং বেসরকারি খাতে আয় হয়েছে ২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে এই সময়ে আদায় হয়েছিল ৮১ কোটি টাকা।

এদিকে গৃহকর আদায় কমে যাওয়ায় কর আদায়কারীদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা তলব করেছে করপোরেশন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়া কর আদায়কারীদের ইতিমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। করপোরেশনের আটটি রাজস্ব সার্কেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই নোটিশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আদায়ের হার বাড়ানোর জন্য রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন মেয়র ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা।

করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আটটি রাজস্ব সার্কেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গৃহকর আদায় হয়েছে ৭ নম্বর সার্কেলে। এই সার্কেল ২৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা আদায় করে। এরপর ৮ নম্বর সার্কেল আদায় করে ২১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। তবে সবচেয়ে কম গৃহকর আদায় করেছে ৪ নম্বর সার্কেল। এতে আদায় হয় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

কারণ দর্শানো নোটিশ পাওয়া ৮ নম্বর সার্কেলের কর কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, গত ২০ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৪১ লাখ ১৯ হাজার টাকার বিপরীতে আদায় করেছেন ১৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। নিজের ভুল স্বীকার করে তিনি বলেন, কর আদায়ের হার বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

গৃহকর আদায় কম হওয়া প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, করপোরেশনের নাগরিক সেবা (রাস্তা মেরামত, পরিচ্ছন্নতা, সড়কবাতি) কার্যক্রম পরিচালনা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হয় গৃহকরের টাকা দিয়ে। অথচ গৃহকর দেওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে একটি অনীহা কাজ করে। তাঁরা যদি নিয়মিত গৃহকর পরিশোধ করেন তাহলে নগরকে আরও সুন্দরভাবে সাজানো যায়।

অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য চেষ্টা চলছে বলে জানান মেয়র আ জ ম নাছির। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।