তিন বছরেও অজানা কোকেনের গন্তব্য

>

• তেলের চালানে কোকেন
• ডিবি পুলিশের তদন্তে গন্তব্য অজানা থাকায় র‍্যাবকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ
• র‌্যাবের তদন্তেও তা বের হয়নি
• শুরু হয়নি বিচার

চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ হওয়া কোকেনের চালানের গন্তব্য সাড়ে তিন বছরেও জানা যায়নি। চালানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত কি না, র‍্যাবকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। এখনো শেষ হয়নি তদন্ত। পাশাপাশি একই ঘটনায় করা মাদক মামলার বিচারও শুরু হয়নি। জামিন পেয়ে পলাতক রয়েছেন আসামি। 

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চালানটির গন্তব্য নির্ধারণ ও জড়িত দেশি–বিদেশি চক্রকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে তারা এ ধরনের অপরাধ বারবার করবে। এতে ক্ষতি হবে দেশের।

২০১৫ সালের ৬ জুন পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের চালান জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরপর ২৭ জুন তেলের চালানের ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। বলিভিয়া থেকে আসা চালানটির প্রতিটি ড্রামে ১৮৫ কেজি করে সূর্যমুখী তেল ছিল। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ চারটি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের দুটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়।

এ চালানটি উরুগুয়ের মন্টিভিডিও থেকে জাহাজীকরণ করা হয়। পরে তা সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এর আগে কখনোই বলিভিয়া থেকে সূর্যমুখী ভোজ্যতেল আমদানি করেনি। তা ছাড়া তরল কোকেনকে গুঁড়া বা পাউডার কোকেনে রূপান্তর করার মতো প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে নেই।

কোকেন জব্দের ঘটনায় চট্টগ্রামের বন্দর থানায় ২০১৫ সালের ২৭ জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। আসামি করা হয় চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদকে।

ঘটনার পাঁচ মাস পর চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আটজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। চালানের গন্তব্য অজানা, আন্তর্জাতিক চক্র শনাক্ত না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ নারাজি আবেদন করলে আদালত র‍্যাবকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু র‍্যাবের তদন্তেও চালানটির গন্তব্য বের করা সম্ভব হয়নি। র‍্যাব নূর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আদালত তা গ্রহণ করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচার শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। ২৩ জানুয়ারি পরবর্তী তারিখ রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কোকেন জব্দের ঘটনার মাদক মামলা বিচার শুরুর জন্য প্রস্তুত হলেও চোরাচালান আইনের মামলাটি তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি র‍্যাব। মামলা দুটি হলেও ঘটনা ও সাক্ষী একই। দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম একসঙ্গে চললে সময় বাঁচবে। একজন সাক্ষীকে দুবার আসতে হবে না। এতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে। এ জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দিতে র‍্যাবকে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক ও চোরাচালান আইনে একই ঘটনায় হওয়া দুটি মামলার বিচারও একসঙ্গে হয়েছিল।

পলাতক আসামিরা অধরা
লন্ডনপ্রবাসী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ফজলুর রহমান ও মৌলভীবাজারের বকুল মিয়া এখনো ধরা পড়েননি। আর জামিনে গিয়ে পলাতক হয়েছেন নূর মোহাম্মদ। জামিনে রয়েছেন কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনসের ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী আলম, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইফুল আলম ও আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল। কারাগারে রয়েছেন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা ও পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান।