৬২টি মোড়ে নতুন করে বসছে ট্রাফিক সিগন্যাল

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে নতুন করে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়েছে। গতকাল বাংলামোটর মোড় থেকে তোলা ছবি।  প্রথম আলো
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে নতুন করে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়েছে। গতকাল বাংলামোটর মোড় থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো
>

• ইতিমধ্যে সাতটি মোড়ে সিগন্যাল বাতি স্থাপন
• তবুও এসব এলাকায় ইশারায় যানবাহন চলছে
• সিগন্যাল বাতিগুলো রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ
• চাপ বেশি থাকায় সিগন্যাল মানছেন না চালকেরা
• চালকদের অভ্যাস পরিবর্তনে কিছু সময় লাগবে
• সবার মাঝে ট্রাফিক সচেতনতা বেশি জরুরি

রাজধানীর যানজট কমাতে নগরীর ৬২টি সড়কের মোড়ে নতুন করে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল বাতি বসানোর কাজ চলছে। ইতিমধ্যে সাতটি মোড়ে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়েছে। তারপরও এসব এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় যানবাহন চলছে।

ট্রাফিক সদস্যরা জানান, সিগন্যাল বাতিগুলো রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় ট্রাফিক সিগন্যাল মানছেন না যানবাহনচালকেরা। তাঁদের এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে আরও কিছু সময় লাগবে। এ জন্য সবার মাঝে ট্রাফিক সচেতনতা বেশি জরুরি।

দীর্ঘদিন ধরে নগরীর ট্রাফিক সিগন্যালগুলো অকেজো হয়ে ছিল। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বলতে পুলিশের হাতের ইশারাই ছিল একমাত্র ভরসা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গত ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের ‘ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ সংক্রান্ত এক সভায় ট্রাফিক সিগন্যালে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা পুলিশের কাছে হস্তান্তর সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শহরের ট্রাফিক সিগন্যালগুলো নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পুলিশের হাতে দিতে বলা হয়। এর আগে তা নিয়ন্ত্রণ করত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে ৭২টি গুরুত্বপূর্ণ মোড় রয়েছে। এসব মোড়ে ২০০২ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে (প্রায় ২৫ কোটি টাকা) আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্প। কিন্তু নানা ধরনের ত্রুটির কারণে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। গত বছরের ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশের পর ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি থেকে সিগন্যাল বাতিগুলো ট্রাফিক পুলিশের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তার আগেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় কেইস প্রকল্প। এ জন্য প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ থেকে রিমোট ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। এখন সিগন্যালগুলো সক্রিয় করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বাংলামোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, কার্জন হল (শিক্ষাভবন) ও শাহবাগ মোড়ের ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা শেষ হয়েছে। এগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ লাগানো হয়েছে। এখন সেগুলো রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাফিক পুলিশ।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ৭২টি স্থানেই ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর কথা ছিল। কিন্তু মেট্রোরেলের কারণে ৮ থেকে ১০টি স্থানে সিগন্যাল বসানো যাচ্ছে না। আর যে সাতটি স্থানে সিগন্যাল বসানো হয়েছে, সেগুলো গত ৬ ডিসেম্বর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে কারিগরি কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা ঠিক করে দেবে কেইস প্রকল্প।

জানতে চাইলে কেইস প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে প্রায় এক মাস হলো বাংলামোটর ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে রিমোট দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে সিগন্যাল চালু করা হয়েছে। তা সফল হওয়ার পর এই সাতটি ট্রাফিক সিগন্যাল হস্তান্তর করা হয়। এর আগে পুলিশের সাতজন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন এর যথাযথ বাস্তবায়ন করবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বাকি সিগন্যালগুলো ঠিক করে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের কাছেই দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সকাল ও বিকেলে অফিসগামী লোকদের কারণে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ যেদিকে গাড়ির বেশি চাপ দেখে, সেদিকে রিমোটের মাধ্যমে সময় নির্ধারণ করে দেবে। কত মিনিট সিগন্যালে থাকতে হবে, তা সিগন্যাল বাতির একটিতে দেখানো হবে। বাকি সময় রিমোট দিয়েই নির্ধারণ করা থাকবে।

সরেজমিন চিত্র: গতকাল শনিবার বিকেল চারটা, মৎস্য ভবন মোড়। শাহবাগের দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসছে সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস। এ বাসের পেছনে আরও ৮ থেকে ১০টি ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিও আসছে। এ সময় মৎস্য ভবন মোড়ে সিগন্যাল বাতিতে জ্বলছিল লাল চিহ্ন। কিন্তু তার তোয়াক্কা না করেই চলে গেলেন চালকেরা। পরে ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় অন্য যানগুলো থামে। একইভাবে প্রেসক্লাব বা কাকরাইল মসজিদের দিক থেকে আসা যানবাহনগুলোকে ট্রাফিক সিগন্যাল মানতে দেখা যায়নি। তবে পুলিশ হাতে ইশারা দিলে জেব্রা ক্রসিং ছেড়ে গাড়ি দাঁড়াচ্ছে। পুলিশের হাতের ইশারায় যানবাহন চলছে। শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মসজিদ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে একই চিত্র দেখা গেছে।

তবে ভিন্ন কথা বলেছেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যালগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। সব কটি সিগন্যাল বাতি বসানো হলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসবে।