ছিনতাইয়ের অভিযোগে হল থেকে বিতাড়িত ছাত্রলীগ নেতা

ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে মারধর করে হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

২ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে পলাশী এলাকা থেকে কলেজপড়ুয়া দুটি ছেলেকে হলে এনে ওই নেতার ‘শেল্টারে’ মারধর ও তাদের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

বিতাড়িত ওই নেতার নাম আমির হামজা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের ছাত্র এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

হল শাখা ছাত্রলীগ কমিটির কয়েকজন পদধারি নেতা বলেন, আমির হামজা অনেক দিন ধরে হলে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এবং ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা আদায়সহ নানা অপরাধ করে আসছিলেন। তাঁর অপরাধের কয়েকটি ঘটনা গণমাধ্যমেও এসেছে। তাই হল শাখার বিভিন্ন পক্ষের নেতা-কর্মীরা তাঁকে বোঝানোর জন্য হলের অতিথি কক্ষে ডাকেন। কিন্তু তিনি সেখানে সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে জানানো হলে তাঁরাও ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকের বিরুদ্ধে তাঁদের শক্ত অবস্থানের কথা জানান। পরে আমির হামজাকে হল থেকে বিতাড়িত করা হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিফাত উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামজাকে মারধরের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা সবাই তার সঙ্গে কথা বলছিলাম। হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষ পদপ্রত্যাশী কামাল হোসেন রানা, অনন্ত আনন্দসহ আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলাম। লেদারের ছাত্ররা আমাদের হলে অবৈধ, তারা ড. কুদরত-ই-খুদা হলের ছাত্র। হামজা কারও কথা শোনেও না, মানতেও চায় না। ওর বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন অপরাধের খবর আসে। এতে একদিকে ছাত্রলীগের যেমন দুর্নাম হচ্ছে, অন্যদিকে জহুরুল হক হলেরও বদনাম হচ্ছে। সে অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছে এবং হলের সম্মান ক্ষুণ্ন করছে।’

রিফাত বলেন, ‘তোমার জুনিয়র তোমার শেল্টারে ঘটনাটা ঘটিয়েছে, ব্যাপারটা কীভাবে দেখছ—এ ব্যাপারে হামজার সঙ্গে আমরা কথা বলছিলাম। তখন সে উত্তেজিত হয়ে আমাদের সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। তার ডাকে তার জুনিয়ররা লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে হলে হট্টগোল করে। পরে হলের একজন আবাসিক শিক্ষক ও হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার এসে পরিস্থিতি শান্ত করলে আমরা যে যার মতো ফিরে যাই, আমির হামজা তার অনুসারীদের নিয়ে হলের বাইরে চলে যায়।’

ঘটনার সময় উপস্থিত জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমির হামজাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে—এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। গতকাল রাতে কী ঘটেছিল, সেটি বলতে হলে আমাকে আরও তদন্ত করতে হবে। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড জহুরুল হক হলের মাধ্যমে হয়। তাদের থাকার জন্য হাজারীবাগে একটি আবাসিক ভবন রয়েছে। তবে তারা জহুরুল হক হলের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন আমির হামজাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘অভিযোগ ওঠা আমির হামজার হলে আবাসিকতা আছে কি না কিংবা লেদার ইনস্টিটিউটের ছাত্ররা কীভাবে হলে অবস্থান করতে পারবে—এটা নিয়েও আমরা হল প্রশাসনকে জানিয়েছি। জহুরুল হক হল ও এসএম হলে ছিনতাইসহ বাজে কিছু ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে জহুরুল হক হলের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার জন্য হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা আমির হামজাকে হল থেকে বের করে দিয়েছে, যাতে হল কোনো অপরাধীর আশ্রয়স্থল না হয়ে ওঠে।’

আমির হামজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে রাজনীতি করে দুটি ছেলে, তিন দিন আগে পলাশীতে বহিরাগত দুটি ছেলের সঙ্গে তাদের ধাক্কা লেগে তাদের ফোন ভেঙে যায়। ক্ষুব্ধ হয়ে ওরা বহিরাগতদের ফোন নিয়ে নেয়। ঘটনাটা আমি শুনি গতকাল বিকেলে। হলে এসে আমি ওদের ফোন উদ্ধারের ব্যবস্থা করে দিই। রিফাত ও কামাল নামে হল ছাত্রলীগের দুই নেতা, যারা এর আগে বিভিন্ন ঘটনায় অভিযুক্ত, তারা আগের একটা রাগ থেকে আমাকে মারধর করে ও আমার সঙ্গে গতকাল রাতে ঘটনাটা ঘটায়। তারা নিজেদের দায়টা আমার ওপর চাপিয়েছে। তারা আমার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনেছেন, কিন্তু প্রমাণ দিতে পারেনি। ছিনতাইয়ের সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত না।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এটি হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। হল প্রশাসন দেখছে। তারা আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করব।’