শহরে এসেছে নতুন অতিথি

>

এ বছর প্রথমবারের মতো পাবনা শহরে দেখা মিলল অতিথি পাখি। শীতকালে বাংলাদেশে যেসব অতিথি পাখি দেখা যায়, তার মধ্যে পাতি সরালি অন্যতম। গতকাল পাবনার পৌর এলাকার ১২ নম্বর ওয়ার্ড জলাশয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
এ বছর প্রথমবারের মতো পাবনা শহরে দেখা মিলল অতিথি পাখি। শীতকালে বাংলাদেশে যেসব অতিথি পাখি দেখা যায়, তার মধ্যে পাতি সরালি অন্যতম। গতকাল পাবনার পৌর এলাকার ১২ নম্বর ওয়ার্ড জলাশয়ে। ছবি: প্রথম আলো

ইটপাথরের শহরটি এখন পাখির কিচিরমিচিরে মুখর। ‘পাতি সরালি’ এখন এ শহরে নতুন অতিথি।

কুয়াশা মোড়ানো শীতের সকাল। ইটপাথরের শহরে তখনো শুরু হয়নি যান্ত্রিক কোলাহল। হঠাৎ পাখির কিচিরমিচিরে মুখর হয়ে উঠল জলাশয়ের চারপাশ। চোখ আটকে গেল ওড়াউড়ি, ছোটাছুটি আর পানিতে হুটোপুটিতে ব্যস্ত একঝাঁক পাখির দিকে। পাবনা শহরের নতুন অতিথি এখন তারা। ‘পাতি সরালি’ পাখি এরা। এই অতিথি পাখির দেখা মিলল পৌর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে।

শীতকালে বাংলাদেশে যেসব অতিথি পাখির আগমন ঘটে, তার মধ্যে এই পাতি সরালি অন্যতম। এটি ছোট সরালি বা গেছো হাঁস নামেও পরিচিত।

পাখি পর্যবেক্ষক ও কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি এসআই সোহেলের তথ্যমতে, পাতি সরালি নিশাচর স্বভাবের পাখি। দিনে জলমগ্ন ধানখেত ও জলাশয়ের আশপাশে দল বেঁধে খুনসুটিতে ব্যস্ত থাকলেও রাতে খাবারের সন্ধানে চরে বেড়ায়।

এদের প্রধান খাবার জলজ গুল্ম, নতুন কুঁড়ি, শস্যদানা, ছোট মাছ, ব্যাঙ, শামুক, কেঁচো ইত্যাদি। এরা মূলত জুটি বেঁধে দুর্গম বিল-হাওরে বসবাস করে। তাই শীত ছাড়া এদের একত্রে তেমন একটা দেখা যায় না।

সরেজমিনে গতকাল রোববার ভোরে দেখা যায়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। বড় বড় দালানকোঠা। মাঝে ছোট্ট একটা জলাশয়। কচুরিপানাপূর্ণ এই জলাশয়েই ঘুরছে পাতি সরালির দল। ওদের কিচিরমিচিরে মুখর পুরো এলাকা। বাড়ির ছাদ, বারান্দা থেকে এলাকাবাসী উপভোগ করছে সেই দৃশ্য।

কথা হয় স্থানীয় আবদুল্লাহ্ শাফির সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অতিথি পাখির সমাগম ঘটলেও পাবনা শহরে এবারই প্রথম। নগরের যান্ত্রিক শব্দের বদলে এখন শহরবাসীর ঘুম ভাঙে পাখির কোলাহলে। পাখি শিকারি বা বাইরের কোনো লোকজন যেন ওদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, এলাকাবাসী তা নজরে রাখছে।

পাবনা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ও আলোকচিত্রী এহসান আলী বিশ্বাস জানান, এই পাখি দেশি প্রজাতির হলেও পাবনার জন্য তারা অতিথি। পাখি শিকারের বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচারণা বাড়ানোর পাশাপাশি আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই পাখিদের রক্ষা করতে হবে।

সামাজিক বন বিভাগ পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘শীতের এই সময়ে পাবনার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর অতিথি পাখিসহ দেশীয় পাখপাখালির বিচরণ ঘটে। এসব পাখির নিরাপত্তার জন্য রাজশাহী বন্য প্রাণী বিভাগ ও পুলিশের সহায়তায় আমরা মাঝেমধ্যেই অভিযান পরিচালনা করি।’