'স্ত্রী ফোনে হামলার খবর দিয়েছিলেন'

>
  • ফোন পেয়ে বেকারির দিকে ছুটে যান
  • জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে আহত হন তিনি
  • ১৩ দিন চিকিৎসার পর বাসায় ফেরেন তিনি

রাত পৌনে নয়টার দিকে স্ত্রীর ফোন পান গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি লাজালুস শরেন। উৎকণ্ঠা নিয়ে স্ত্রী ফোনে তাঁকে জানান, হোলি আর্টিজানে গোলাগুলি হচ্ছে। তখন তিনি বাইরে ছিলেন, ফোন পেয়ে বেকারির দিকে ছুটে যান। গেটের সামনে পৌঁছামাত্রই জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে আহত হন তিনি।

গতকাল রোববার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাক্ষ্যে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা এভাবেই শুরু করেন লাজালুস শরেন। এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের ষষ্ঠ দিনে লাজালুস ছাড়াও সাক্ষ্য দেন হোলি আর্টিজান বেকারির কর্মী (ওয়েটার) আশরাফুজ্জামান। তাঁরা দুজনই জঙ্গি হামলার প্রাথমিক পর্বের প্রত্যক্ষদর্শী।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২ পুলিশসহ ২২ জন নিহত হন।

বিচারক মো. মুজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষী লাজালুস শরেন বলেন, তাঁর স্ত্রী হোলি আর্টিজানের কাছেই ইজুমি রেস্তোরাঁর কাজ করেন। স্ত্রীর কাছ থেকে গোলাগুলির খবর পেয়েই তিনি বিষয়টি বেকারির মালিককে জানান। মালিক লাজালুসকে জানান, তিনি এগোচ্ছেন, লাজালুসও যেন যান। একটি বাইসাইকেলে করে তিনি সেখানে পৌঁছান। প্রায় একই সময় পুলিশের গাড়িও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। এতে লাজালুস আহত হন। তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চার দিন থাকার পর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১৩ দিন চিকিৎসার পর বাসায় ফেরেন তিনি।

আরেক সাক্ষী আশরাফুজ্জামান আদালতকে বলেন, রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার দিকে তিনি বিকট শব্দ শুনতে পান। দেখেন অস্ত্রধারী দুই যুবক বেকারির মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এরপর আবারও তিনি গোলাগুলির শব্দ শোনেন। বেকারির ভেতরে থাকা অতিথিরা তখন ভয়ে ছোটাছুটি করছিলেন। তিনি ভয়ে পিৎজা রুমের পাশের গেট দিয়ে বেরিয়ে পাশের লেকভিউ ক্লিনিকে আশ্রয় নেন। আনুমানিক রাত ১২টার দিকে র‍্যাব সদস্যরা আশরাফুজ্জামান ও লেকভিউ ক্লিনিকের কর্মীদের একটি কক্ষে অপেক্ষা করতে বলেন। রাতভর তাঁরা ওই কক্ষ থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান।

আশরাফুজ্জামান আদালতকে বলেন, ঘটনার পরদিন সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ লেকভিউ ক্লিনিক থেকে তাঁদের উদ্ধার করে। এরপরই তিনি পুলিশের সঙ্গে বেকারিতে ঢোকেন। সেখানে গিয়ে দেখেন মেঝে রক্তে মাখামাখি। অতিথি আর বেকারির কর্মীদের মুঠোফোন, ল্যাপটপ, ব্যাগসহ আরও অনেক জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

দুই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর আসামি রাশেদ ওরফে র‍্যাশ ও রাকিবুল ইসলাম ওরফে রিগ্যানের আইনজীবী ফারুক আহমেদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না জানতে চান ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। আইনজীবী না–সূচক জবাব দেন। আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান ওরফে সাগর ও আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজের জন্য নিয়োগ দেওয়া আইনজীবীরাও জেরা করেননি দুই সাক্ষীকে।