মানবতার ভ্রাম্যমাণ সুখ পাখি

বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ভ্যানে রাখা হয়েছে শীতবস্ত্র। গত শনিবার সিরাজগঞ্জ শহরের চান্দু আলী মোড়ে।  ছবি: প্রথম আলো
বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ভ্যানে রাখা হয়েছে শীতবস্ত্র। গত শনিবার সিরাজগঞ্জ শহরের চান্দু আলী মোড়ে। ছবি: প্রথম আলো

সড়কের মোড়ে একটি ভ্যান দাঁড়ানো। এর নাম সুখ পাখি। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘সুখ পাখি মানবতার ভ্রাম্যমাণ। আপনার যেটা প্রয়োজন সেটা নিয়ে যান। আপনার যেটা অপ্রয়োজন সেটা রেখে যান।’ ভ্যানটি ঘিরে নারীসহ বেশ কিছু মানুষের ভিড়। সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানটিতে সাজানো রয়েছে বেশ কিছু শীতবস্ত্র। এগুলো দুস্থ শীতার্ত মানুষের জন্য উপহার। লোকজন নিজ নিজ প্রয়োজন ও পছন্দমতো শীতবস্ত্র বেছে নিচ্ছে।

জানতে চাইলে ভ্যানটির সঙ্গে থাকা দুজন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বন্ধুত্ব থেকে মানুষের কল্যাণে কিছু করার তাগিদ থেকে গড়ে উঠেছে একটি গ্রুপ—যার নাম সুখ পাখি। তাঁদের উৎসাহ আর চেষ্টায় এই শীতে দুস্থ মানুষের মধ্যে কাপড় বিতরণের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সুখ পাখির অন্যতম উদ্যোক্তা মো. রজব আলী শেখের বাড়ি সিরাজগঞ্জ শহরে। তিনি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। গতকাল সোমবার জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় এক বছর আগের কথা। ফেসবুকে পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে মানুষের জন্য কিছু করার বাসনার কথা জানালে অনেকেই উৎসাহ দেখান। একে একে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন সদস্য ১১০ জন। উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগের বাড়ি সিরাজগঞ্জ শহরে। প্রতি মাসে তাঁরা ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেন। সেই টাকায় মানবকল্যাণমূলক নানা কাজ করা হয়।

এবারে শীত শুরু হওয়ার পরে পরামর্শ করে তাঁরা ঠিক করেন দুস্থ মানুষের সহায়তা দেবেন। তাঁদের উষ্ণ রাখতে কিছু করবেন। এ জন্য এই ভ্যান তৈরি করা হয়। সময় নির্ধারণ করে সুখ পাখির মানবতার এ ভ্যান বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শীতের কাপড় সংগ্রহ ও বিতরণ শুরু করে। শুরুতেই ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়।

উদ্যোক্তাদের আরেকজন সাবেরা লীনা সিরাজগঞ্জ শহরের একজন গৃহিণী। তিনি বলেন, সবই চলে স্বেচ্ছাসেবায়। লোকজন নিজে থেকেই গরম কাপড় দিচ্ছেন। অনেকে নতুন কাপড়ও দিচ্ছেন। নতুন-পুরোনো সব কাপড়ই এই ভ্যানের সাজিয়ে রাখা হয়। ভ্যানটি প্রতি শুক্রবার ও শনিবার একেক এলাকায় নেওয়া হয়। খবর পেয়ে দুস্থ মানুষেরা আসে। একেকজনকে একটি করে কাপড় বেছে নিতে বলা হয়। তাঁরা নিজের পছন্দ ও মাপ অনুযায়ী ঠিক ঠিক একটি কাপড় বেছে নেন। তিনি আরও বলেন, ‘পছন্দের কাপড় হাতে নিয়ে এসব মানুষের মুখে অদ্ভুত হাসি দেখা যায়। কিছুটা তৃপ্তির আর কৃতজ্ঞতার এ হাসি। তখন খুবই ভালো লাগে। তখন মনে হয়, মানুষের জন্য কিছু করতে পারা সত্যিই অনাবিল আনন্দের। তখন মনে হয়, আমাদের পরিশ্রম সার্থক।’

বিনা মূল্যে শীতবস্ত্র পেয়েছেন, এমন অন্তত পাঁচজন বলেন, তীব্র শীতে উত্তরবঙ্গ কাঁপছে। তাঁরা গরিব মানুষ। শীত নিবারণের জন্য পর্যাপ্ত গরম কাপড় কিনবেন, এমন সামর্থ্য তাঁদের নেই। একটি গরম কাপড়ের জন্য কতজনের কাছে ধরনা দিয়েছেন, কিন্তু পাননি। আর এঁরা কিনা বাড়ির সামনে এসেছেন। ভ্যানভর্তি নানা রঙের আর মাপের শীতবস্ত্র। যেমন ইচ্ছে নেওয়া যায়। এমন মহৎ কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা জানা নেই।

এ কাজের অংশীদার সাইফুল ইসলাম কর্মজীবী। তিনি বলেন, তাঁদের আয়োজন সামান্যই। তবে কিছু একটা করতে পারছেন, এটিই তাঁদের সান্ত্বনা। দুই সপ্তাহ ধরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে অন্তত ৭০০ মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।

উদ্যোক্তা মো. রজব আলী শেখ বলেন, সুখ পাখি কার্যক্রমের আওতায় কুড়িগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কম্বল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুখ পাখি টি স্টল ও সুখ পাখি টেইলার্সের কার্যক্রম চলছে।