সুষ্ঠু বিচারের আশায় পথ চেয়ে পরিবার

>
  • আট বছর আগে ৭ জানুয়ারি হত্যা করা হয় ফেলানীকে
  • কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে
  • ফেলানীর পরিবার বলছে, এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাননি তাঁরা

‘আমরা তো মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের আশায় বসে আছি; এখনো বিচার পাইনি। আপনাদের মাধ্যমে আবার দাবি করছি, ভারত সরকার যেন বিচারটা করে’—এ আকুতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানী খাতুনের বাবা নুরুল ইসলামের। গতকাল সোমবার বাংলাদেশি এই কিশোরীকে হত্যার আট বছর পূর্ণ হয়েছে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে আট বছর আগে ৭ জানুয়ারি হত্যা করা হয় কিশোরী ফেলানীকে। দিনটি উপলক্ষে ফেলানীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে গতকাল ফেলানীর গ্রাম নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারীর জামে মসজিদে বাদ জোহর মিলাদ মাহফিল ও কাঙালিভোজের আয়োজন করা হয়।

ফেলানীর পরিবার বলছে, ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার বিএসএফের বিশেষ আদালত থেকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ালেও এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাননি তাঁরা। ন্যায়বিচারের আশায় সর্বোচ্চ আদালতে দুটি রিট পিটিশন করেছেন তার বাবা; যা বর্তমানে বিচারাধীন। এর আগে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে দুই দফায় বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিএসএফের বিশেষ আদালত।

গতকাল সকালে ফেলানীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার মা জাহানারা বেগম মেয়ের কবর পরিষ্কার করছেন। এ সময় তিনি বলেন, দিনটা এলেই তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না। তাঁর তিন মেয়ে, তিন ছেলে। ফেলানী নিহত হওয়ায় এখন পাঁচ সন্তান। তারা সবাই পড়াশোনা করে।

কথা হয় ফেলানীর বোন মালেকা খাতুন ও ছোট ভাই জাহান উদ্দিনের সঙ্গে। মালেকা এইচএসসি ও জাহান এসএসসি পরীক্ষা দেবে। দুজনই বলল, ফেলানী সবার বড়। তার কথা তাদের খুব মনে পড়ে।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম এ হত্যা মামলার শুনানি বারবার পেছানোর ও বিচারকাজ আটকে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ ফেলানী হত্যা ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে রিট আবেদন গ্রহণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সংস্থাকে কারণ দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর সর্বোচ্চ আদালত গত বছরের ১৮ জানুয়ারি রিট দুটির ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন। কিন্তু শুনানি হয়নি।

ফেলানীর প্রতিবেশী পল্লি চিকিৎসক আবদুল মান্নান ও কৃষক আজমত আলী বলেন, সারা বিশ্ব এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জেনেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে ফিরে গেছে। কিন্তু আট বছর পেরিয়ে গেলেও সুষ্ঠু বিচার হয়নি।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবার সঙ্গে ভারত থেকে ফিরছিল ফেলানী। সীমান্তে এসে মই দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া টপকানোর সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী। তার নিথর দেহ কাঁটাতারের বেড়ায় চার ঘণ্টা ঝুলে ছিল। এ দৃশ্য প্রকাশের পর দেশ-বিদেশে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমালোচনার মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ওই বছরই ৬ সেপ্টেম্বর অমিয়কে খালাস দেন আদালত। পুনর্বিচারের দাবিতে ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানালে বিজিবি-বিএসএফ বৈঠকে পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত হয়।