মেয়েটি শরণার্থী শিবির থেকে কলেজে

ফরমিন আকতার
ফরমিন আকতার

ছাত্রী হিসেবে বেশ ভালো ফরমিন আকতার। ২০১৭ সালের মার্চে রাখাইনের একটি স্কুলে পড়ত সে। সেখান থেকে যারা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল তাদের মধ্য পাস করেছিলেন মাত্র চারজন। ফরমিন সেই চারজনের একজন। একই রকম মেধাবী ছিল তার বোন নূর জাহান। কিন্তু মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে তারা এখন কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে। সেখানে বিয়ে হয়েছে নূর জাহানের। কিন্তু এখনো পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে ফরমিন।

রোহিঙ্গা কিশোরী ফরমিনের শরণার্থী শিবির থেকে কলেজে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফরমিনকে বেড়ে উঠতে দেখেছেন, এমন অনেকেই তার গণিত ও ইংরেজিতে আগ্রহের কথা বলেছেন। ফরমিন এখন কক্সবাজারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ২৫ জন মেয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে, ফরমিন তাদেরই একজন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মানবহিতৈষী মার্কিন লেখক হেলেন কেলার তার অনুপ্রেরণা। বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই তার আরেক নায়ক। তাঁদের নিয়ে আগ্রহ ফরমিনের। এটা জানার পর রয়টার্সের সাংবাদিকেরা ফরমিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সঙ্গে পরিচয় আছে এমন কয়েকজনকে খুঁজে বের করেছেন। সবাই ফরমিনের লেখাপড়ার আগ্রহের কথা বলেছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, রাখাইনের দরিদ্র ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করত ফরমিনরা। রাখাইন রাজ্যে ঘরবাড়ির সঙ্গে বইও পুড়ে গেছে ফরমিনের। একই সঙ্গে পুড়েছে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন। তবে তার ইচ্ছা লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার। সে রোহিঙ্গা নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে চায়। ফরমিন ইংরেজি শিখেছে। শরণার্থী নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে কাজ করছে। এখন কলেজে ভর্তি হয়ে অনেকটাই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে তার। নতুন বন্ধু পেয়েছে। কলেজে ফারসি শিখছে। এ ছাড়া গিটার ও কারাতে শিখছে। তবে ইংরেজি আরও ভালো শেখার আশা করে সে।

ফরমিন মনে করে, রোহিঙ্গা নারীদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

ফরমিনের বিষয়টি রয়টার্সে প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে টুইট করেছেন মালালা ইউসুফজাই। এতে দারুণ রোমাঞ্চিত ফরমিন। সে বলে, ‘মালালা আমার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়।’