প্রধান আসামিসহ আরও দুজনের স্বীকারোক্তি

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের এক গ্রামে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে নারীকে (৪০) গণধর্ষণের ঘটনায় আরও দুই আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এঁরা হলেন মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি মো. সোহেল ও তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততায় গ্রেপ্তার হওয়া জসিম উদ্দিন।

আজ বুধবার বিকেলে নোয়াখালীর ২ নম্বর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নবনীতা গুহ আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। দুই আসামি মো. সোহেল ও জসিম উদ্দিন রিমান্ডে আছেন। এখনো ধরা পড়েনি এ মামলার তিন আসামি।

মো. সোহেল ও জসিম উদ্দিনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জাকির হোসেন। সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পাঁচ দিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিনে আজ সোহেল ও জসিম উদ্দিন আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হন। পরে বিকেলে তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। জবাবন্দিতে তাঁরা ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

এর আগে গত সোমবার গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আবুল (৪০) ও ছালা উদ্দিন (৩৫)। এ নিয়ে এ ঘটনায় চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন।

এখনো ধরা পড়েনি তিন আসামি
নারীকে মারধর ও গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজহারভুক্ত তিন আসামি এখনো পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। তাঁরা হলেন ২ নম্বর আসামি হানিফ (৩০), ৪ নম্বর আসামি চৌধুরী (২৫) ও ৮ নম্বর আসামি মোশারফ (৩৫)। এ প্রসঙ্গে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, তাঁদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সফলতা পাওয়া যেতে পারে।

আইনি সহায়তার ঘোষণা
সুবর্ণচরের গণধর্ষণের শিকার সেই নারীকে সব ধরনের আইনি সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে নোয়াখালী আইন সহায়তা কমিটি ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। আজ দুপুরে নোয়াখালী প্রেসক্লাবে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

ব্রিফিংয়ে নোয়াখালী আইন সহায়তা কমিটির আহ্বায়ক গোবিন্দ চন্দ্র দাস লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘নির্যাতিত নারীকে সব আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ আইনি সহায়তার মাধ্যমে তাঁরা ওই নারীর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যাতে ধর্ষকেরা কোনোভাবে আইনের ফাঁকে বের হতে না পারে। ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আইনজীবীদের নিয়ে আইনি সহায়তা কমিটি করা হয়েছে। আমরা সব সময় নির্যাতিত নারীদের পাশে আছি।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা আহ্বায়ক ও সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) কাজী মানছুরুল হক, আইনি সহায়তা কমিটি নোয়াখালীর সদস্যসচিব সহিদ উল্যা, সদস্য রিপন চক্রবর্তী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যান। কেন্দ্রে থাকা কয়েক যুবক তাঁদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বলেন। রাজি না হলে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ওই যুবকেরা। এরপর ওই দিন রাতে ১০-১২ জনের একদল যুবক ঘরে ঢুকে প্রথমে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে মারধর করেন। পরে স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই নারীকে ঘরের বাইরে নিয়ে গণধর্ষণ করেন।

এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ৩১ ডিসেম্বর চরজব্বর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজহারভুক্ত ছয়জন এবং তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও তিনজনসহ মোট ১০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ঘটনার ইন্ধনদাতা বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ সাতজন আসামিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। আজ ছিল রিমান্ডের তৃতীয় দিন।
আরও পড়ুন
সুবর্ণচরে গণধর্ষণ: দুজনের স্বীকারোক্তি, সমাবেশ-বিক্ষোভ