'আব্বু, তুমি আমার জন্মদিনে অনেক বড় একটা কেক কিনবা'

আজ ছিল ফারিয়া আক্তার দোলার জন্মদিন। নৃশংসতার শিকার হয়ে সে এখন না ফেরার দেশে। তার ছবি হাতে মা পারভিন বেগমের আহাজারি। ৯ জানুয়ারি, ঢাকা। ছবি: হাসান রাজা
আজ ছিল ফারিয়া আক্তার দোলার জন্মদিন। নৃশংসতার শিকার হয়ে সে এখন না ফেরার দেশে। তার ছবি হাতে মা পারভিন বেগমের আহাজারি। ৯ জানুয়ারি, ঢাকা। ছবি: হাসান রাজা

‘আব্বু, তুমি আমার জন্মদিনে অনেক বড় একটা কেক কিনবা’ —জন্মদিন সামনে রেখে এভাবেই বায়না করেছিল ফারিয়া আক্তার দোলা। পঞ্চম জন্মদিনে সবার সঙ্গে কেক কাটার ইচ্ছে ছিল শিশুটির। কিন্তু দুই দুর্বৃত্তের নির্মমতার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হলো দোলাকে। বড় কেক আর কাটা হলো না।

দোলার বাবা ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ বুধবার দোলার জন্মদিন ছিল। কয়দিন ধরে কি যে বায়না করতেছিল। খালি বায়না আর আবদার। ইচ্ছা ছিল আজ বিকালে বাড়ি আইসা একটা কেক কিনমু। কিন্তু আমারে কাফনের কাপড় কিনতে হইল।’

কোনাবাড়ির কাছে ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন ফরিদুল। তিনি বলেন, ‘কেন শিশু দুটিকে হত্যা করা হলো? মোস্তফার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। নিহত আরেক শিশু নুসরাতের পরিবারের সঙ্গেও আমাদের কোনো আলাপ ছিল না।’

নুসরাত ও দোলাকে হত্যার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গোলাম মোস্তফা ও আজিজুল বাওয়ানীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই দুজনের কাছ থেকে গামছা, শিশুদের দুই জোড়া স্যান্ডেল, সাউন্ডবক্স ও লিপস্টিক উদ্ধার করা হয়।

আজ বুধবার দুপুরে মিন্টো রোডে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আজিজুল বাওয়ানী সম্পর্কে মোস্তফার মামাতো ভাই। তাঁরা দুজন মিলে দুই শিশুকে ধর্ষণের ফন্দি আঁটেন। খেলতে থাকা শিশু দুটিকে লিপস্টিক দেওয়ার কথা বলে ফ্ল্যাটে নিয়ে যান মোস্তফা। ঘরে নেওয়ার পর প্রথমে নুসরাত ও দোলাকে তাঁরা সাজিয়ে দেন। এরপর মোস্তফা ও আজিজুল মিলে ইয়াবা সেবন করে দুই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। দুই শিশু যখন চিৎকার করছিল, তখন মোস্তফা ও আজিজুল সাউন্ডবক্সে উচ্চ স্বরে গান চালিয়ে দেন। একপর্যায়ে দোলাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন আজিজুল। এরপর নুসরাতকে গামছার ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন মোস্তফা।

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয় দুই শিশু নুসরাত ও ফারিয়াকে। ছবি: ফাইল
ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয় দুই শিশু নুসরাত ও ফারিয়াকে। ছবি: ফাইল

পুলিশ বলছে, শিশু দুটির বাসার পাশেই গোলাম মোস্তফার ফ্ল্যাট। সেখানে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে সাবলেট থাকতেন। মোস্তফা পেশায় পোশাকশ্রমিক।

দোলার লাশ আজ নওগাঁয় তাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। নুসরাতের লাশ গতকাল রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গত সোমবার রাত নয়টার দিকে ডেমরার কোনাপাড়ায় হজরত শাহজালাল সড়কে একটি ফ্ল্যাট থেকে সাড়ে চার বছর বয়সী নুসরাত জাহান ও পাঁচ বছরের ফারিয়া আক্তার দোলার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সড়কে পাশাপাশি বাড়িতে থাকে শিশু দুটির পরিবার। প্রতিদিন খেলতে বের হতো এই দুই শিশু।

সোমবার দুপুর থেকেই এই দুই শিশু নিখোঁজ ছিল। নিহত দোলার চাচা রাশেদুল ইসলামের ভাষ্য, দুপুরের পর থেকে শিশু দুটিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজি শেষে তাদের না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। যখন মাইকিং করা হচ্ছিল, তখন এলাকার এক যুবক তাঁদের জানান, মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে দুপুরের পর শিশু দুটিকে ডেকে তাঁর ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। ওই যুবকের কাছ থেকে এ কথা জানতে পেরে মোস্তফার খালা সেই ফ্ল্যাটে যান। সেখানে তিনি শিশু দুটিকে পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় মোস্তফা যাতে ঘর থেকে বের হতে না পারেন, সে জন্য তিনি (খালা) বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে আশপাশের লোকজনকে খবর দেন। তবে লোকজন এসে মোস্তফাকে ঘরে পায়নি।

গোলাম মোস্তফাকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে যাত্রাবাড়ীর ভাঙ্গা প্রেস এলাকা থেকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে ডেমরা থানা-পুলিশ। মোস্তফার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজিজুলকে ডেমরার কাউন্সিলের মোল্লা ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।