ডাকসু গঠনতন্ত্র নিয়ে মতবিনিময়: সংগঠনগুলোর ভাবনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এই সভা হয়৷ সভায় উপস্থিত হয়ে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা কমিটির কাছে মৌখিকভাবে গঠনতন্ত্র সংশোধনে তাঁদের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ ও বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

কমিটির পক্ষ থেকে ছাত্রসংগঠনগুলোকে আগামী সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে। বক্তব্য পর্যালোচনা করে আগামী বুধবার ডাকসুর গঠনতন্ত্র পরিমার্জনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ দেবে কমিটি।

ছাত্রদল বক্তব্য উপস্থাপন করেনি

সভায় অংশ নেওয়া প্রায় সব সংগঠন ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে মৌখিকভাবে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করলেও ছাত্রদল এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করেনি। ছাত্রদলের মূল দাবি ছিল, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও সমান সুযোগের নিশ্চয়তাবিধান। একমাত্র ছাত্রলীগ ছাড়া সভায় অংশ নেওয়া অন্য সব ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব সংগঠনের সহাবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।

গঠনতন্ত্র সংশোধনে সংগঠনগুলোর সুপারিশ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলা ভাষায় ডাকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও ক্যাম্পাসে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন সব সংগঠনের অভিন্ন দাবি। ডাকসুর নির্বাহী কমিটিতে সভাপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার দাবি জানিয়েছে বামপন্থী সংগঠনগুলো। ছাত্রলীগ চাইছে, নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই হবেন ডাকসুর প্রার্থী ও ভোটার। তবে দীর্ঘ সময় পর ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ আসায় সব ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংগঠনটি।

ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ-মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন সুজন ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী রায়, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক উলুল আমর অন্তর, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রাহাত, জাসদ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পাল প্রমুখ অংশ নেন।

‘প্রগতিশীল ছাত্রজোটের দাবি ও সুপারিশ’
মতবিনিময় সভা শেষে বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে বামপন্থী সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট। জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। ডাকসুর নির্বাহী কমিটিতে সভাপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার দাবি জানিয়ে জোটের নেতারা বলেছেন, উপাচার্য এককভাবে প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের মাধ্যমে সর্বজনগ্রাহ্য একজনকে এ কাজে নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষায় তাঁদের স্বার্থবিরোধী যেকোনো আইন বা তৎপরতার বিরুদ্ধে ডাকসু কমিটির ভূমিকা রাখার বিষয়টি গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। হলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দখলদারি রয়েছে উল্লেখ করে তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, অন্তত এবারের ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের ভেতর না হয়ে কাছের একাডেমিক ভবনে রাখতে হবে। এ ছাড়া ডাকসুতে ছাত্র অধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টি এবং বিদ্যমান গঠনতন্ত্রের সমাজসেবা সম্পাদক ও সামাজিক বিনোদন সম্পাদক পদ দুটির নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে সমাজকল্যাণ ও পরিবেশ সম্পাদক এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক করার দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত হলো সংসদের মাধ্যমে ধর্মীয় কার্যক্রম আয়োজনের বিষয়টি বাতিল করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের দাবিগুলোসহ তাদের সাংগঠনিক বক্তব্য জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সভায় ডাকসুর বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে থাকা কমনরুম সম্পাদকের তিনটি পদ বিলুপ্ত করে এর স্থলে যথাক্রমে ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদকের পদ অন্তর্ভুক্ত করা; আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি; নির্বাচন সুষ্ঠু, প্রভাবমুক্ত ও সর্বজনগ্রাহ্য করতে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন এবং গঠনতন্ত্রে হল সংসদের ২২ নম্বর ধারায় উল্লিখিত ব্যয়ের পরিমাণকে বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে পুনঃসংশোধন।

পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ক্ষমতার একাধিপত্যের বিষয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোট বলছে, ‘গঠনতন্ত্রের ৫(এ) ধারায় সভাপতিকে এই মর্মে ক্ষমতা দেওয়া আছে যে তিনি যেকোনো সময় নির্বাহী কোনো সদস্যকে বরখাস্ত করতে পারেন, এমনকি নির্বাহী কমিটিও বাতিল করতে পারেন। এরূপ ধারা গণতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ৮(এম) ধারা অনুযায়ী নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে সভাপতির গৃহীত কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের কোনো রায় কার্যকর হবে না, যা আমাদের সংবিধানের ৩১ ধারার পরিপন্থী। এই দুটি ধারার নিরীক্ষণ ও আশু সংশোধন প্রয়োজন।

‘ছাত্রলীগ কী চাইছে’
সভা শেষে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকসুর বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, এটিই সর্বোত্তম নিয়ম। কিন্তু যেহেতু দীর্ঘ সময় পর নির্বাচন হচ্ছে, এই নির্বাচনের স্বার্থে যদি কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন হয় বা গঠনতন্ত্রে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের সায় আছে। ডাকসু নির্বাচনের জন্য সব ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছি। তবে নিয়মিত ছাত্রত্বের মাপকাঠির বাইরে যেতে আমরা খুবই কম আগ্রহী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা অনতিবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল আশা করি। মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই যেন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়, সেই দাবিও আমরা জানিয়েছি।’

সহাবস্থানের বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। কিন্তু ক্যাম্পাসে একটা ছাত্রসংগঠন কীভাবে আসবে, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পারব না। তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রয়েছে। ডাকসু নির্বাচনে কোন সংগঠন বিজয়ী হবে, সেটি মুখ্য বিষয় নয়। আমরা চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভোটাধিকার ফিরে পাক। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমেই সংগঠনগুলো প্রমাণ করুক সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু।’

সভায় ছাত্রলীগের সুপারিশ বা বক্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ডাকসুর গঠনতন্ত্রটি বাংলায় প্রণয়ন, ডাকসুর কাঠামোতে যেন পর্যাপ্ত হারে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, ডাকসুতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টি। এ ছাড়া একাডেমিক ক্যালেন্ডারের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের বিষয়টি গঠনতন্ত্রে সংযোজনের দাবিসহ সব সংগঠনের জন্য একটি অভিন্ন আচরণবিধি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

ছাত্রদলের বক্তব্য
সভায় অংশ নিতে বেলা ১১টায় সিনেট ভবনের সম্মেলনকক্ষে আসেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতা ও নিরাপত্তায় তাঁরা সভায় অংশ নিতে আসেন। সভায় গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে কোনো সুপারিশ দেয়নি সংগঠনটি। তাদের মূল দাবি ও বক্তব্য ছিল ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও সমান সুযোগ।

সভা শেষে আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের ব্যাপারে আমরা কোনো সুপারিশ বা বক্তব্য দিইনি। আমরা চিঠি পেয়েছি ৮ জানুয়ারি। আমরা মাত্র এক দিন গঠনতন্ত্রটি পর্যালোচনার সময় পেয়েছি৷ অন্যান্য সংগঠন চাইলে আধা ঘণ্টার নোটিশে ক্যাম্পাসে জড়ো হতে পারে, কিন্তু আমরা পারি না। কারণ আমাদের প্রশাসনিকভাবে হয়রানি করা হয়, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নেই। আমাদের মূল দাবি ছিল ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। তাই আমরা কমিটির কাছে ১৫ দিন সময় চেয়েছি। পরে কমিটি আমাদেরসহ সব সংগঠনকে আগামী সোমবারের মধ্যে লিখিতভাবে বক্তব্য বা সুপারিশ দাখিল করতে বলেছে।’

ছাত্রসংগ্রাম পরিষদও সহাবস্থান চায়
ছাত্রলীগ ও কয়েকটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের জোট ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারাও মনে করেন না ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান আছে। এ বিষয়ে এর আগে তাঁদের কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও এবার তাঁরা সহাবস্থানের বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন।

জোটভুক্ত জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আহসান হাবীব শামীম মনে করেন না ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান আছে। শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার বিষয়টি আমাদের মূল দাবি ছিল৷ হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ারও নজির রয়েছে। কমিটির কাছে আমরা এসবের সমাধান চেয়েছি। প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাই যেন নির্বাচনে সমান সুযোগ নিয়ে অংশ নিতে পারেন৷’

কমিটির বক্তব্য
সভা শেষে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্রে যদি কোনো ধরনের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হয়, সেটি প্রশাসন মনে করতে পারে। কিন্তু ডাকসু যেহেতু শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন, তাই শিক্ষার্থীরা কী ভাবছে, সেটাও খুবই জরুরি। সবার বক্তব্য শুনে এই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি সুপারিশ দেবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যেভাবে নেওয়া হয়ে থাকে, সেভাবেই নেওয়া হবে।’

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সবার বক্তব্য পর্যালোচনা করে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও যুগোপযোগী করতে আগামী বুধবার উপাচার্যকে আমরা একটি সুপারিশ দেব।’