আড্ডার স্বপ্ন থেকে সফল উদ্যোক্তা

>
  • তিন বন্ধুর সিদ্ধান্ত ছিল, ‘আমরা চাকরি করব না; চাকরি দেব’
  • তাঁরা তৈরি করছেন ‘র‌্যাটস-আই’ ব্র্যান্ডের টি-শার্ট ও পোলো গেঞ্জি
  • কাতার ও ভারতের বাজারেও পৌঁছে গেছে

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর করার সময় ক্যাম্পাসের আড্ডায় তিন বন্ধুর সিদ্ধান্ত ছিল, ‘আমরা চাকরি করব না; চাকরি দেব।’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে তিন বন্ধুর নামের আদ্যক্ষর নিয়ে ‘র‌্যাটস-আই’ নামে যশোর শহরের খড়কি এলাকায় গড়ে তোলা হয় তৈরি পোশাকের একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁরা তৈরি করছেন ‘র‌্যাটস-আই’ ব্র্যান্ডের টি-শার্ট ও পোলো গেঞ্জি। এই পোশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন তা কাতার ও ভারতের বাজারেও পৌঁছে গেছে।

প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, ১৫ জন তরুণ-তরুণী শীতের গরম পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ পোশাক তৈরি করছেন, কেউবা সেই পোশাক প্যাকেজিংয়ের কাজ করছেন। কারখানার পাশেই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। বিপণন ও হিসাব বিভাগে কাজ করছেন আরও পাঁচজন। এঁদের কয়েকজন কলেজে পড়াশোনা করছেন।

এই তিন বন্ধু উদ্যোক্তা হলেন রুহুল কুদ্দুস, আল-মামুন ও তৌহিদুর রহমান। তাঁদের সবার বাড়ি যশোরে। প্রতিষ্ঠানটিতে পূর্ণকালীন চাকরি করেন আবু রায়হান। তিনি এমএম কলেজে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ে দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের হিসাব শাখায় কাজ করেন। একই কলেজের স্নাতকোত্তর পর্বের ছাত্র সুমন কবির প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বিপণন বিভাগে চাকরি করছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে পরিবারের মতো আমরা কাজ করি। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই।’

কথা হয় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের একজন আল-মামুনের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁরা তিন বন্ধু একই স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেছেন। পড়েছেনও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে তিনজনই এমবিএ শেষ করেছেন। তখন ক্যাম্পাসের আড্ডা থেকে তাঁদের মাথায় আসে, চাকরি করবেন না; উদ্যোক্তা হবেন। সেই চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন।

উদ্যোক্তা আল-মামুন বলেন, ‘শুরুর গল্পটা এত সুন্দর ছিল না। প্রথম দিকে নিজেদের তৈরি টি-শার্ট মাথায় নিয়ে আমরা বাজারে দোকানে দোকানে নিয়ে বিক্রি করেছি। দোকানিরা তখন এমন আচরণ করতেন যেন, আমরা ওই সব পণ্য চুরি করে এনে বিক্রি করতে এসেছি। তারপরও আমরা হাল ছাড়িনি। প্রথম বছর আমরা লোকসানে ছিলাম। এখন আমাদের প্রতি মাসে ৮–১০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তাতে সব খরচ বাদে ৫ শতাংশ হারে লাভ হচ্ছে। ব্যবসাটা আরও বড় করতে চাই।’ তবে এ মুহূর্তে তাঁদের মূলধনের সংকট রয়েছে বলে জানান তিনি।

আরেক উদ্যোক্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে তাঁদের ৩৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এর একটি টাকাও তাঁরা পরিবার থেকে আনেননি। ব্যবসা শুরুর আগে তাঁরা এক বন্ধুর মাধ্যমে ঢাকা থেকে এক্সপোর্টের গেঞ্জি ও লেদারের ব্যাগ এনে বিক্রি করতেন।

আরেক উদ্যোক্তা রুহুল কুদ্দুস জানান, তাঁদের কারখানায় তৈরি পণ্য এখন কাতারের বাজারে জিএল ব্যান্ড নামে পাঠানো হচ্ছে। দুই বছরে ১২ হাজার টি-শার্ট পাঠানো হয়েছে। আর ভারতের বাজারে ‘ব্ল্যাক ফেদার’ ব্র্যান্ড নামে পাঠানো হয়। এখন ফ্রান্সে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

এ ছাড়া দেশের বাজারে ‘আর্ট ফোর্ট’ নামের একটি নামী ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানে তাঁদের তৈরি টি-শার্ট ও কলার গেঞ্জি (পোলো) দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে তাঁদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্য যশোর, ঢাকা, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারের দোকানে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটিতে যশোরের অন্তত ২০ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের পাশেই এই প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও কার্যালয়। এ কারণে কলেজের শিক্ষার্থীরাও এখানে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।

কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ সদস্য হুমায়ুন কবির। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিন তরুণ ভালোই করছেন। তাঁদের সব ধরনের কাগজপত্র রয়েছে। বৈধভাবে ব্যবসা করছেন। এখানে ২৫–৩০ জন তরুণের কর্মসংস্থান হয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো আরও ভালো করবেন।