প্রকৃতির জন্য পাখি মেলা

পাখি মেলায় শিশুদের আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি।
পাখি মেলায় শিশুদের আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি।

‘শহরের ইট-পাথরের দেয়ালে কাক ছাড়া তেমন আর কোনো পাখি দেখা যায় না। গাড়ি আর বিচিত্র সব যন্ত্রের বিদঘুটে শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। দিন দিন যেন কৃত্রিম হয়ে উঠছি আমরা। তাই একটু প্রাকৃতিক পরিবেশে পাখির ওড়াউড়ি আর কিচিরমিচির শব্দ শুনতেই সকাল সকাল আসা।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জাহানারা ইমাম হল-সংলগ্ন লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে পাখি দেখতে দেখতে কথাগুলো বলছিলেন আসমা বেগম (৫৫)। গণমাধ্যমে পাখি মেলার খবর শুনে রাজধানীর উত্তরা থেকে এসেছেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শুক্রবার দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাখি মেলা ২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অষ্টাদশবারের মতো এ মেলার আয়োজন করা হয়। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন।

এ সময় উপাচার্য বলেন, ‘প্রকৃতির বরপুত্র পাখি। পাখি থাকলে গাছ থাকবে। আর গাছ থাকলে ফুল ও ফল থাকবে। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া আছে বলেই সারা বিশ্বে সুন্দর পরিবেশ বিদ্যমান। কিন্তু দিনদিন এই প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে হুমকির দ্বারপ্রান্তে আমাদের পৃথিবী।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

উপাচার্য আরও বলেন, ‘এ মেলা আমাদের পাখির সঙ্গে একটা মেলবন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করছে। পাখিদের প্রতি আমাদের মনোভাব পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করছে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি সচেতন হতে হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, পাখি মেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক কামরুল হাসান প্রমুখ।

এদিকে মেলার উদ্বোধনের আগে সকাল ১০টায় বিগ বার্ড বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড, কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ও সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ প্রদান করা হয়। নতুন ও দুর্লভ প্রজাতির পাখির সন্ধান পাওয়ায় এবার বিগ বার্ড বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শফিকুর রহমান, মো. কায়েস ও তৌকির হাসান। কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন রাহুল এম ইউসুফ, আদিব মুমিন ও আবদুল্লাহ আল ওয়াহিদ। এ ছাড়া সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মুনতাসির আকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।

এ ছাড়া দিনব্যাপী আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা, অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে পাখি চেনা প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল পাঁচটায় এসব প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে মেলা শেষ হয়।