কল লিস্টের সূত্র ধরে মিলল খুনির পরিচয়

>
  • মুঠোফোনে পারভিনকে ঘর থেকে ডেকে বাগানে যেতে বলেন
  • ছুরি দিয়ে গলা কেটে পারভিনকে হত্যা করেন
  • স্ত্রী পারভিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন শেখ সেলিম
পারভিন আক্তার
পারভিন আক্তার

নোয়াখালী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের পূর্ব শুল্লাকিয়া গ্রামের তরুণী পারভিন আক্তারকে (২০) তাঁর স্বামী শেখ সেলিম খুন করেছেন বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মারা যাওয়ার আগে মুঠোফোনে কথোপকথনের কল লিস্টের সূত্র ধরে পিবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার করে। শেখ সেলিম (২৯) নিজেকে নিহত পারভিনের স্বামী বলে উল্লেখ করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

শুক্রবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের চাটগাঁও থানা এলাকার মৌলভী পুকুরপাড় এলাকার একটি টিনের ঘর থেকে সেলিমকে পিবিআইয়ের একদল সদস্য গ্রেপ্তার করেন। পরে গতকাল শনিবার দুপুরে নোয়াখালী শহরের মাইজদী হাউজিং এস্টেটের পিবিআইয়ের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানানো হয়।

ব্রিফিংয়ে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, সেলিম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন পারভিনের সঙ্গে চট্টগ্রামে গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে তাঁর পরিচয় ও সম্পর্ক হয়। নিজের প্রথম স্ত্রী ও এক বছরের সন্তান থাকার পরও গত রমজানের তিন দিন আগে পারভিনকে তিনি বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ের বিষয়টি পারভিনের কাছে গোপন রাখা হয়। বিয়ের পর ঢাকায় তাঁরা দুই মাস একসঙ্গে থাকেন।

শেখ সেলিম জানিয়েছেন, ঢাকায় দুই মাস একসঙ্গে থাকার পর প্রথম স্ত্রী ঘটনাটি জেনে গেলে তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করে পারভিনকে নিয়ে চট্টগ্রামে একই বাসায় থাকেন এক মাস। এরপর পারভিনের পরিবার বিয়ের বিষয়টি জেনে গেলে তাঁরা তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে তিন মাস আগে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে নিয়ে যান। এরপর তিনি (শেখ সেলিম) একাধিকবার গ্রামে এসে পারভিনের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেলিমের দাবি, গ্রামে আসার পর পরিবার তাঁকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করায় পারভিনের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তাঁকে (পারভিন) হত্যার পরিকল্পনা করেন।

বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া সেলিম জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি গত বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে বাসযোগে নোয়াখালীর সোনাপুর এসে নামেন। সেখান থেকে একটি ছোরা কিনে সন্ধ্যায় পারভিনদের বাড়ি যান। এরপর মুঠোফোনে পারভিনকে ঘর থেকে ডেকে বাইরে বাগানে নিয়ে তাঁর সঙ্গে যেতে বলেন। কিন্তু পারভিন যেতে রাজি না হওয়ায় তিনি তাঁকে পেছন থেকে চুল টেনে ধরে গলায় ছুরি চালান। এতে এক টানেই পুরো গলা কেটে যায়। এরপর ক্ষোভ মেটাতে তিনি পারভিনের শরীর ক্ষতবিক্ষত করে গায়ের জামা পরিবর্তন করে খেতের আইল দিয়ে সোনাপুর হয়ে রাতেই চট্টগ্রাম ফিরে যান।

গ্রেপ্তার সেলিম নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ডিগ্রিরচর গ্রামের মৃত শুক্কুর আলী শেখের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর পদে চাকরি করতেন। পারভিনকে হত্যার ঘটনায় তিনি একাই জড়িত বলে দাবি করলেও এ ঘটনায় অন্য কেউ সম্পৃক্ত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।

এদিকে গতকাল দুপুরে ব্রিফিংয়ের পর একই কার্যালয়ের নিচতলায় বসে থাকা নিহত পারভিনের বাবা জহুরুল হক ও মা অজিফা খাতুনকে মেয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বলেন, তাঁরা মেয়ের বিয়ের বিষয়টি জানতেন না। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাকরি থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। মেয়ের খুনির সর্বোচ্চ সাজা চান তাঁরা।

গত বুধবার রাতে সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের পূর্ব শুল্লাকিয়া গ্রামের পারভিন আক্তার নামের ওই তরুণী খুন হন। রাতেই সুধারাম থানা-পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পরদিন এ ঘটনায় নিহতের বাবা জহুরুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। ওই দিনই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয় পিআইবি। ঘটনার পর নিহতের পরিবার জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে পারভিনকে খুন করা হয়েছে দাবি করলেও পুলিশের ধারণা ছিল, তীব্র ক্ষোভ থেকে কেউ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।