আসামি ধরা নিয়ে হুলুস্থুলে নিহত ১, আহত ১৫

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আসামি ধরতে গেলে পুলিশের সঙ্গে আসামিপক্ষের লোকজন ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়েছেন। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন ১৫ জন। গতকাল শনিবার উপজেলার চানপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তির নাম আশিকুর রহমান বাবুল (২২)। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার বাইতোলা গ্রামে। আহত লোকজনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশের একটি দল উপজেলার মদনপুরের চানপুর এলাকায় আসামি ধরতে যায়। এ সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য খলিলুর রহমানের সমর্থক হিসেবে পরিচিত এবং মামলার আসামি দীপু ও সুজনকে আটক করে পুলিশ। খবর পেয়ে দীপু ও সুজনের সহযোগীসহ এলাকার লোকজন টেঁটা, বল্লমসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে ও সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে তাঁরা হামলা চালিয়ে দীপু ও সুজনকে ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী, কনস্টেবল দেবাশীষ, মনোয়ার, মোহনসহ ১৫ জন আহত হন। পুলিশের ছোড়া গুলিতে আশিকুর রহমান নামের ওই যুবক প্রথমে গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত লোকজনকে উদ্ধার করে এবং রিফাত ও নূরনবী নামের দুজনকে আটক করে। সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। স্থানীয় লোকজন পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। রোববার সকাল সোয়া ৯টার দিকে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাহরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ মামলার দুই আসামিকে ধরতে গেলে আসামি ও এলাকার লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালান এবং তাঁরা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শটগানের ১৫টি গুলি ছোড়ে। পুলিশ এই ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে।

এই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাস্মদ আলী বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও দুই শতাধিক জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মামুন আব্দুল্লাহকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ দিকে দায়িত্বে অবহেলা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে নিয়ে পুলিশ লাইনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ নভেম্বর মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পরিবহনের চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ইউপি সদস্য খলিলুর রহমানকে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার জের ধরে ইউপি সদস্যের সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালান এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে ৫ পুলিশসহ ২০ জন আহত হন। ওই ঘটনায় দুই পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলার আসামি ধরতে গেলেই গতকাল এমন হুলুস্থুল হয়।