ঝামেলাহীন বাসা বদল

বাসা বদলের এমন দৃশ্য রাজধানীতে প্রায়ই চোখে পড়ে। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো
বাসা বদলের এমন দৃশ্য রাজধানীতে প্রায়ই চোখে পড়ে। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো

মাসের শেষ বা প্রথম সপ্তাহে বালিশ–তোশক, হাঁড়ি–পাতিলের লটবর নিয়ে শহরের পথে ঠেলাগাড়ি বা ট্রাকের চলতে থাকার দৃশ্যটি খুব চেনা। ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই থাকেন ভাড়া বাড়িতে। চাকরি বা ব্যক্তিগত কারণে বাসা বদলও ভাড়াটিয়া জীবনযাপনের নিয়মিত অনুষঙ্গ।

বাসা বদলানো মানেই হরেক রকমের ঝক্কি-ঝামেলা। এ থেকে মুক্তি দিতে বাসা বদলের সুবিধা দিতে ঢাকা শহরে কাজ করছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। শুধু ফোনে বা অনলাইনে ফরমাশ দিলেই চলবে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব লোকবল দিয়ে হাজির হয়ে যাবে। আসানের সঙ্গে বাসা বদল পর্ব সমাধান করবে তারা নির্দিষ্ট খরচার বিনিময়ে।

সম্প্রতি এমন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাসা বদল করা শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করেন। থাকতেন ধানমন্ডি এলাকায়। ব্যক্তিগত কারণে তিনি বনানীতে বাসা বদলের সিদ্ধান্ত নেন। খোঁজাখুঁজি করে পছন্দমতো একটি বাসাও পান। পরে বাসা বদলের দায়িত্ব দেন একটি বাসা বদলকারী প্রতিষ্ঠানকে। তারাই বাসার মালামাল গোছানো, বাঁধাছাঁদা করা, নতুন বাসায় নিয়ে যাওয়া, ইলেকট্রিকসামগ্রী লাগিয়ে দেওয়াসহ সব কাজ করেছেন। এতে তাঁর ২০-২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

রাজধানীতে প্রায় ১০ বছর ধরে বাসা বদলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বেঙ্গল মুভার্স (www.bengalmovers.com)। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার রেদোয়ান হোসাইন বলেন, বাসা বদলের পাশাপাশি অফিস বদল বা স্থানান্তরের কাজও তাঁরা করেন। প্রতি মাসে ৪০-৬০টি বাসা বা অফিস বদলের ফরমাশ পায় তাঁর প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, ফরমাশ পাওয়ার পর সরেজমিনে তাঁরা বাসা বা অফিস পরিদর্শন করেন। এরপর কী পরিমাণ মালামাল সরাতে হবে, সে অনুযায়ী খরচ নির্ধারণ করেন। বেঙ্গল মুভার্সের পাশাপাশি ঢাকা মুভার্স (www.dhakamovers.com) ও রাজধানী মুভার্স (www.rajdhanimovers.com) নামের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত আছেন বলে জানিয়েছেন। বাসা বদলের সময় কোনো মালামালের ক্ষতি হলে কিংবা কোনো কিছু হারিয়ে গেলে বাজারমূল্য অনুযায়ী তার ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন রেদোয়ান হোসাইন।   

অনলাইন ঘেঁটে এই তিন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও প্যাক অ্যান্ড শিফট (www.packnshift.com), মুভ অ্যান্ড সেটেল (www.movensettle.com), মেট্রো মুভার্স (www.metromoversgroup.simplesite.com), সেবা এক্সওয়াইজেড (www.sheba.xyz), দরকারিসহ (www.dorkary.com) আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে।

প্যাক অ্যান্ড শিফট নামের প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা শহরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাসা বদলের ব্যবসা শুরু করে। দীর্ঘ ১৮ বছরে প্রতিষ্ঠানটি সাবেক রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রদূত, সচিব, কবি, সাহিত্যিকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের বাসা বদল করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে তাদের অনেকেরই নিজস্ব পরিবহন ও দক্ষ শ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান, এসি মিস্ত্রি, থাই মিস্ত্রি, স্যানিটারি মিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, পেইন্টারসহ বিভিন্ন দক্ষ লোকবল আছে। তারা কাচের মালামাল বা ক্রোকারিজ ও শৌখিন অ্যান্টিকজাতীয় মূল্যবান সামগ্রী যত্নের সঙ্গে খুলে মোড়ক করে আবার নতুন বাসায় লাগিয়ে দেয়। এ ছাড়া নতুন বাসায় নতুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টিভি, ফ্যান, লাইট, খাট, গিজার, চুলা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এভাবে বাসা বদল করতে কত খরচ হবে, তা নির্ধারণ করে বাসা বা অফিসের আকার, পথের দূরত্ব, মালামালের পরিমাণ, কত তলা থেকে নামবে আর কত তলায় উঠবে, এসব বিষয়ের ওপর। মুভ অ্যান্ড সেটেলের তথ্য অনুযায়ী, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থানান্তরে ২ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, গিজার ৩ হাজার টাকায়, আইপিএস ১ হাজার ৮০০ টাকায়, টেলিভিশন ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায়, প্রতিটি সিলিং ফ্যান ২৫০ টাকায়, টিউবলাইট ২০০ টাকায়, আলমারি ১ হাজার ৮০০ থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায়, ওয়াশিং মেশিন ১ হাজার ২০০ টাকায় স্থানান্তর করা হয়। মালামাল বাঁধার কাজ করায় নিয়োজিত প্রতিজনকে দিতে হয় ৮০০ টাকা। সব মিলিয়ে খরচের অঙ্কটি বেশ স্বাস্থ্যবানই হয়ে ওঠে। ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে চাইলে ব্যয়ভার বহনের সামর্থ্য তো থাকতেই হবে।