আছিয়া ও তাঁর মোবাইল ফোন

আছিয়া খাতুন। ছবি: আবদুস সালাম
আছিয়া খাতুন। ছবি: আবদুস সালাম

কার্জন হলের সীমানা প্রাচীরঘেঁষা ফুটপাতে বসে মোবাইল ফোনে কিছু একটা দেখছেন সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা। তাঁর পাশে এক শিশু। মুহূর্তটি ফ্রেমবন্দী করে তাঁদের কাছে এগিয়ে গেলাম। তাঁরা একটি সস্তা মোবাইল ফোনে ‘নসিমন’ চলচ্চিত্র দেখছেন। বৃদ্ধার ঘোলা চোখে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে প্রতিচ্ছবি জ্বলজ্বল করছে। কথা বলে জানলাম, শিশুটি বৃদ্ধার নাতি। নাম রাব্বি। আর বৃদ্ধার নাম আছিয়া খাতুন।

কিডনির সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভোগা আছিয়া সারা দিন এই ফুটপাতেই পড়ে থাকেন। তাঁর দীর্ঘ অবসরে এই মোবাইল ফোনটিই বিনোদনের মাধ্যম। আছিয়ার তিন মেয়ে— রাজিয়া, কোহিনূর ও শিল্পী। এখন তিনি ছোট মেয়ে শিল্পীর সঙ্গেই থাকেন। স্বামী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে ফুটপাতেই শিল্পীর বসবাস। টানাটানির সংসারে মা আছিয়া খাতুন যোগ হয়েছেন ২০১৬ সাল থেকে। তার আগে আছিয়া গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে ছিলেন। গ্রামে এখন নিজের বাড়ি বলে তাঁদের কিছু নেই। সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ২০০২ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেই ঠাঁই হয় তাঁর। বয়স বাড়ছে, বাড়ছে স্বাস্থ্যগত জটিলতাও, তাই ছোট মেয়ে শিল্পী মাকে নিজের কাছে এনে রাখেন। শিল্পীর স্বামী ফুটপাতেই রিকশা ও রিকশা-ভ্যান মেরামতের কাজ করেন। তাঁর আয় দিয়ে এতগুলো মানুষের চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয় শিল্পীকে।

আছিয়া খাতুনের হাতে মোবাইল ফোন। ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
আছিয়া খাতুনের হাতে মোবাইল ফোন। ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

মোবাইল ফোনটি শিল্পীর। বয়সের কারণে আছিয়া খাতুন খুব বেশি নড়াচড়া করতে পারেন না। শিল্পী জানান, তিনিই মাকে খাইয়ে দেন, গোসল করান। দিনের বেশির ভাগ সময়ই আছিয়া খাতুন শুয়ে থাকেন। শরীর ভালো থাকলে মোবাইল ফোনে বাংলা সিনেমা দেখেন।

মোবাইল ফোনে ছায়াছবি দেখছেন আছিয়া খাতুন। ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম
মোবাইল ফোনে ছায়াছবি দেখছেন আছিয়া খাতুন। ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি। ছবি: আবদুস সালাম

শিল্পী বলেন, ‘মা (আছিয়া) আগে কখনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। ঢাকায় আসার পর সময় কাটাতে তিনি মোবাইল ফোনে সিনেমা দেখা শুরু করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিনেমা মা খুব মন দিয়ে দেখেন এবং দুঃখের ছবি দেখে মা কান্নাকাটিও করেন।’ মোবাইল ফোনটি চার্জ করা হয় কীভাবে? জানতে চাইলে শিল্পী বলেন, ‘চায়নিজ মোবাইল ফোন, একবার চার্জ দিলে তিন-চার দিন যায়। চার্জ শেষ হয়ে গেলে আলম নামের এক পরিচিত ব্যক্তি তাঁর কেরানীগঞ্জের বাসা থেকে মোবাইল ফোনটি চার্জ করে আনেন।’

শিল্পী জানান, আছিয়ার একটি কিডনি নষ্ট। সাধ্যমতো আছিয়ার চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি ও তাঁর স্বামী। শিল্পী আক্ষেপ করে বলেন, ‘অনেকেই সাহায্য করার কথা বলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর দেন না।’ সাহায্য পেলে মার চিকিৎসা করাতে চান শিল্পী।