জাপা প্রার্থী আগেই চূড়ান্ত, তারপরও ফরম বিক্রি

একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০টির মধ্যে জাতীয় পার্টি পাচ্ছে ৪টি। এই ৪টি আসনে চারজন নারীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কথা জানিয়ে সম্প্রতি সংসদের স্পিকারের দপ্তরে চিঠিও পাঠানো হয়। ৪ আসনে জাতীয় পার্টির ৪ প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর এখন আবার ওই পদেই দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের দাম ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা।

দলটির একজন দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, ছয় দিনের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে আগের অবস্থান বদলে গেল। এর পেছনে ‘মনোনয়ন-বাণিজ্য’ কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন ওই নেতা। তিনি বলেন, প্রার্থী যখন চূড়ান্ত, তখন এ ধরনের কাজ দলের মধ্যে ভুল বার্তা দেবে। সন্দেহ তৈরি করবে এটাই স্বাভাবিক।

গত বুধবার ৪ জনকে মনোনয়ন দিয়েছিল দলটি। এই তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমেও পাঠানো হয়। আজ মঙ্গলবার আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নারী প্রার্থীদের মধ্যে নতুন করে ফরম বিতরণের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। জানতে চাইলে জাপার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগের মনোনয়ন ঠিক ছিল না। আগে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা অবশ্য হতবাক দলের এই অবস্থানে।

গত বুধবার জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের উপ-প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংরক্ষিত নারী আসনে দলটি চারজনকে প্রার্থী দিয়েছে। জাপা মনোনীত ওই চার প্রার্থী হলেন পারভীন ওসমান (নারায়ণগঞ্জ), শাহীনা আক্তার (কুড়িগ্রাম), নাজমা আখতার (ফেনী), মনিকা আলম (ঝিনাইদহ)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতিমধ্যেই মনোনয়নসংক্রান্ত চিঠি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতীয় সংসদের স্পিকার বরাবর পাঠানো হয়েছে। 

আজ এরশাদের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠান। সেখানে বলা হয়, সংরক্ষিত মহিলা আসনে জাতীয় পার্টির মহিলা প্রার্থীদের মধ্যে আবেদনপত্র বিতরণ শুরু হবে। কাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় থেকে আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। পার্টি তহবিলে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে এই আবেদনপত্র গ্রহণ করতে হবে। ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত এই আবেদন ফরম বিতরণ চলবে।

মনোনয়ন নিয়ে এই উল্টো পথে হাঁটা কেন? উত্তরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়ন দিয়ে চিঠি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানোর নিয়ম। কিন্তু পাঠানো হয়েছে স্পিকারের কাছে। তাই নতুন করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’

রাঙ্গা আবার এও বলেন, ‘মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় ভিড় হয় খুব। তা এড়াতেই ৪ জনের নাম দেওয়া হয়েছিল।’

আর সুনীল শুভ রায় বলেছেন, ‘আগের মনোনয়ন ঠিক ছিল না। তাই আগের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা হয়েছিল।’

মসিউর রহমান বা সুনীল শুভ রায় যে কারণই দেখান, জাপার মনোনয়ন পাওয়া নারী প্রার্থীরা কিন্তু বলেছেন তাঁদেরই প্রার্থী করার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে মনোনয়ন পাওয়া পারভীন ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো মনোনয়ন পেয়েছি। কাল ফরম সংগ্রহ করব। এখন নতুন করে আবার প্রার্থী ঠিক করা হবে, তা তো জানি না। এটার খোঁজ নিতে হবে।’

ঝিনাইদহের প্রার্থী মনিকা আলম বলেন, ‘আমি অলরেডি সিলেকটেড (ইতিমধ্যেই মনোনীত)। নতুন করে প্রার্থী করার কোনো ঘটনা জানি না। পার্টি আমার কর্মকাণ্ড বিবেচনা করেছে। আমার নাম গণমাধ্যমেও গেছে।’

মনিকা আলম বলেন, ‘আমার নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে কথা দিয়েছেন। তিনি মৃত্যুশয্যায় কথা দিয়েছেন। এটা রাখা হবে বলে আশা করি।’

উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য: আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে আগ্রহী প্রার্থীদের প্রাথমিকভাবে তাঁদের ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা অনুরোধ জানিয়েছেন।