ফেব্রুয়ারিতে জার্মানি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

>
  • জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা
  • মিউনিখে অন্য দেশের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের প্রস্তুতি
  • পাশ্চাত্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও নিবিড় করার উদ্যোগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

টানা তৃতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সম্পর্ক আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানি যাচ্ছেন। মিউনিখ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি মিউনিখে অনুষ্ঠেয় নিরাপত্তা শীর্ষ সম্মেলনে এ পর্যন্ত ২৫টি দেশের সরকারপ্রধান ও তাঁদের প্রতিনিধিদের যোগদান নিশ্চিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, মিউনিখ সফরের সময় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি, অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান ক্রুজ, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এমা সোলবার্গ, ইইউর জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ফেদরিকা মোঘেরিনি, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্য সাক্ষাতের প্রস্তুতিও চলছে।

ইউরোপে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা এই প্রতিবেদককে জানান, নির্বাচনের পর ক্ষমতায় ফিরে আসার পর বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্ততার জন্য এটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য বড় মঞ্চ। কারণ, শীর্ষ সম্মেলনের মূল কর্ম-অধিবেশনে বক্তৃতার পাশাপাশি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও জোটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা বলার সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে এসব দেশ ও জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সম্প্রসারণের বিষয় আলোচনায় আসবে। তা ছাড়া শীর্ষ সম্মেলনে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির এক কর্ম-অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা।

এদিকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও নিবিড় করার অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক আগামী সপ্তাহে জেদ্দা থেকে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। তিন দিনের এ সফরের সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপসহকারী লিসা কার্টিস, রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিল হেইল ও দক্ষিণ এশিয়া–বিষয়ক সহকারী মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রেন্ডেল শ্রাইভারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পররাষ্ট্রসচিবের ওয়াশিংটন সফরকে কেন্দ্র করে গত রোববার তাঁর দপ্তরে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। পরদিন ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে ওয়াশিংটন সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, মূলত বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা সহযোগিতা গুরুত্ব পেলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপসহকারী লিসা কার্টিস আর রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিল হিলের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিবের আলোচনায় নির্বাচন, সুশাসন ইত্যাদি বিষয় প্রাসঙ্গিকভাবেই আসবে। নির্বাচনের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সরকারকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সরকার আর বিরোধী দলের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার সুযোগটি কাজে লাগানোর ওপর জোর থাকবে পররাষ্ট্রসচিবের আগামী সপ্তাহের ওয়াশিংটন সফরে। বিশেষ করে ২০০০ সালে বিল ক্লিনটনের সফরের পর ঢাকায় আসেননি কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।

এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠককে তাৎপর্যপূর্ণ বলছে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো। তাদের মতে, দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা আর প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা অব্যাহতভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ দমনে দুই দেশ একে অন্যকে অংশীদার মনে করে। এই আবহে পেন্টাগনের প্রতিনিধির সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটি গুরুত্ব পেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিল হেইল গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরিকল্পনা ছিল। আগামী সপ্তাহের পরিকল্পিত যুক্তরাষ্ট্র সফরটিতে ডেভিড হেইলের পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির বিষয়ে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি এটিও আলোচনায় আসতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এ প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

মূলত গত বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক বাংলাদেশ সফরে এসে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তোলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই উদ্যোগে এর মধ্যেই যুক্ত হয়েছে জাপান, ভারতসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশ। আর মার্কিন প্রেসিডেন্টের কৌশলগত উদ্যোগ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি আছে চীনের। অঞ্চল ও পথের উদ্যোগে (বিআরআই) যোগ দেওয়ার পর বাংলাদেশ চীনের উদ্বেগকে বিবেচনায় নিচ্ছে। কারণ, ২০১৬-তে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সফরের পর ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। সামগ্রিক এই প্রেক্ষাপটে হুটহাট যোগ না দিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির বিষয়ে সময় নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ।