ভোটের আগে বিরোধী দলের বড় নেতাদের আটক করা হয়

বাংলাদেশে গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে প্রধান বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডব্লিউ বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০১৯-এ এসব কথা বলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, সারা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জোরদার হচ্ছে।

প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বলা হয়, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে দেশটির কর্তৃপক্ষ প্রধান বিরোধী দলগুলোর জ্যেষ্ঠ সদস্যদের আটক কিংবা গ্রেপ্তার করেছে। হাজার হাজার বিরোধীদলীয় সমর্থকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম ও সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচক নাগরিক সমাজের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মৃত কিংবা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ব্যক্তির বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ
এইচআরডব্লিউ

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত জুলাইয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের সদস্য এবং দলটির ছাত্র শাখার সদস্যরা লাঠিসোঁটা নিয়ে চড়াও হয়। ওই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করায় ‘সহিংসতায় উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আলোকচিত্রী শহিদুল আলম গ্রেপ্তার হন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখেও তিনি ১০৭ দিন কারাভোগ করে মুক্তি পান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের নিপীড়নমূলক ধারাগুলো চিহ্নিত করার কথা থাকলেও নতুন আইনেও পুরোনো আইনের বিধানগুলো রাখা হয়। একই সঙ্গে নতুন নতুন বিধানও যুক্ত হয়েছে। সরকারের সমালোচনা বন্ধে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা এখনো ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকেরা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম অব্যাহত রয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণে মানবিক, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করেছে সরকার। তবে এই জনগোষ্ঠীকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়ায় শিবির ও শিক্ষার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন আলোচনা সফল না হওয়ায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছে সরকার। তবে এই চরে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি বেশি।

এইচআরডব্লিউ জানায়, বাল্যবিবাহের হারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখনো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। যদিও সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে বাল্যবিবাহ মুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। 
এতে আরও বলা হয়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি দিয়ে আইন প্রণয়নসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তবে লিঙ্গভিত্তিক সংখ্যালঘুরা এখনো চাপ ও হুমকির মধ্যে রয়েছে।