'অধ্যাপক নুরুল হক সাহিত্য' পুরস্কার পেলেন আনিসুল হক

‘অধ্যাপক নুরুল হক সাহিত্য পুরস্কার’ গ্রহণ করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। নারায়ণগঞ্জ, ১৮ জানুয়ারি। ছবি: দিনার মাহমুদ
‘অধ্যাপক নুরুল হক সাহিত্য পুরস্কার’ গ্রহণ করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। নারায়ণগঞ্জ, ১৮ জানুয়ারি। ছবি: দিনার মাহমুদ

‘অধ্যাপক নুরুল হক সাহিত্য’ পুরস্কার পেয়েছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক। শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় সুধীজন পাঠাগার ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক এস এম জাবেদ আহমদ।

নারায়ণগঞ্জ সুধীজন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক নুরুল হকের সৌজন্যে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পুরস্কার ও বৃত্তি এবং অভিভাবকদের ক্রেস্ট ও বই উপহার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ আজাদের মাকে নিয়ে তৈরি আনিসুল হকের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পাঠাগারের পরিচালক কাসেম জামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিচালক সদস্য আক্তারুজ্জামান ও সাংস্কৃতিক কর্মাধ্যক্ষ রুনু সিদ্দিকী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পাঠাগারের সহকারী পরিচালক ফাহমিদা সনি।

পুরস্কার নেওয়ার পর আনিসুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘সুধীজন পাঠাগার দেশের বৃহৎ বেসরকারি পাঠাগার। এমন সুন্দর পাঠাগার কোথাও দেখিনি। এই পাঠাগার বই পৌঁছে দেয়, পাঠক সৃষ্টি করে এবং পাঠকের হৃদয়কে আলোকিত করে। এর চেয়ে মহৎ কাজ আর কিছু হতে পারে না। এখানে নানা ধরনের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বাচ্চারা বৃত্তি পেল, এর চাইতে ভালো বিনিয়োগ আর কী হতে পারে। আমরা যেন মানুষের হৃদয়কে, মানুষের মননকে, বিদ্যা-বুদ্ধিকে পৃষ্ঠপোষকতা করি।’ তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের অনেকেই বড় হবে। আমরা জানি না তারা কত বড় হবে। মানুষের মধ্যে অপরিসীম ও অপার সম্ভাবনা আছে।’

কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘নুরুল হক সাহেব কোথা থেকে কোথায় চলে গেছেন। এই বাচ্চাদের মধ্যে থেকে আমরা অনেক বড় বিজ্ঞানী পাব, নাকি অনেক বড় নেতা পাব, আমরা তা জানি না। মানুষের পেছনে, শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগটা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। লাইব্রেরি থেকে অধ্যাপক নুরুল হকের নামে পুরস্কার পাওয়া এটা আমার অনেক বড় সম্মানের ও গৌরবের বিষয়।’

পুরস্কার ও বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আনিসুল হক বলেন, ‘বেশি করে বই পড়বে। বেশি করে খেলাধুলা করবে। আর বেশি করে সংস্কৃতির চর্চা করবে। আমাদের রেজাল্ট ভালো লাগবে। শুধু রেজাল্ট ভালো দিয়ে হয় না। এর বাইরে সংস্কৃতির চর্চা করতে হয় এবং প্রচুর বই পড়তে হয়। বাইরের বই পড়বে।’

বই পড়ায় উৎসাহিত করতে বিল গেটসের প্রসঙ্গ টেনে এই কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘বিশ্বের ধনী ব্যক্তি বিল গেটস বলেছেন, তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। তাঁর বন্ধু সব কটি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মার্ক পেয়েছিল। সেই বন্ধুটি তাঁর কোম্পানিতে চাকরি করেন। ছোটবেলা থেকে বিল গেটসের অনেক স্বপ্ন ছিল। এসব স্বপ্ন তিনি পেয়েছিলেন বই পড়ে। তিনি সব সময় বই পড়েন। তাই আমরা অনেক বেশি বই পড়ব, খেলাধুলা করব, খেলাধুলা করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, আমরা বিজয় লাভ করতে শিখব এবং পরাজয়কে সুন্দরভাবে বরণ করতে শিখব। বাংলাদেশের বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা পরাজয়টাকে সহজে মেনে নিতে পারি না। খেলাধুলা আমাদের সেটা শেখায়।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এস এম জাবেদ আহমদ বলেন, ‘জীবনে বড় হওয়া খুব কষ্টকর। জীবনে বড় কিছু হতে হলে অনেক কষ্ট করতে হবে। তোমরা যদি ওই কষ্ট করতে পারো, তাহলে জীবন তোমাদের অনেক কিছু দেবে। তোমরা যে বৃত্তি ও পুরস্কার পেয়েছ, এটা তোমাদের জীবনে শুরু। এটাকে ধরে রাখতে হবে। এটাকে ধরে রেখেই জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অনেক বই পড়বে। বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই।’

১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সুধীজন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক নুরুল হকের সৌজন্যে ২০১৪ সাল থেকে ‘অধ্যাপক নুরুল হক সাহিত্য পুরস্কার’ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ২০১৫ সালে হায়াৎ মামুদ, ২০১৬ সালে সরদার আব্দুস সাত্তার ও ২০১৭ সেলিনা হোসেন এই পুরস্কার পান।