এনজিওগ্রাম যন্ত্র মাত্র একটি, তা-ও নষ্ট

>

• খুলনা বিভাগের একমাত্র সরকারি এনজিওগ্রাম যন্ত্রটি নষ্ট
• দুই কোটি জনগোষ্ঠীর এই অঞ্চলের হৃদরোগীরা এখন বিপাকে
• কর্তৃপক্ষ বলছে এনজিওগ্রাম যন্ত্র স্থাপনের জন্য প্রক্রিয়া চলছে

খুলনা বিভাগের একমাত্র সরকারি এনজিওগ্রাম যন্ত্রটি নষ্ট। নগরের শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঁচ মাস ধরে যন্ত্রটি পড়ে আছে। আরেকটি এনজিওগ্রাম যন্ত্র চালু আছে, সেটি অবশ্য বেসরকারি হাসপাতালে। ফলে এই অঞ্চলের হৃদ্‌রোগীরা বিপাকে পড়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, খুলনা নগরের আবু নাসের হাসপাতালে দুই হাজার টাকায় হৃদ্‌রোগীদের এনজিওগ্রাম করানো হতো। এখন বেসরকারি ফরটিস এসকর্টস হাসপাতালই এই অঞ্চলের হৃদ্‌রোগীদের একমাত্র ভরসা। তবে এখানে এনজিওগ্রাম ও চিকিৎসা ব্যয়বহুল। খরচ কম হওয়ায় হৃদ্‌রোগীরা আবু নাসের হাসপাতালের ওপরই বেশি নির্ভরশীল ছিল। যন্ত্রটি চালু করতে কয়েক দফায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে আবু নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগ চালু থাকলেও তা পরিপূর্ণ নয়। সেখানে কোনো এনজিওগ্রাম যন্ত্র নেই। এই হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনজিওগ্রাম যন্ত্র বসানোর মতো আলাদা কোনো কক্ষ নেই এ হাসপাতালে। নেই কোনো টেকনিশিয়ানও। তবে এনজিওগ্রাম যন্ত্র স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

সরকারি আবু নাসের হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালের একমাত্র এনজিওগ্রাম যন্ত্রটি ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চালু হয়েছিল। গত বছরের ১৯ আগস্ট নষ্ট হয়ে যায়। ২৯ আগস্ট একজন প্রকৌশলী যন্ত্রটি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন জমা দেন। ওই সময় যন্ত্রটি মেরামতের মূল্য ধরা হয় ২৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ২৩ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য কারিগরি ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে আরও একটি চিঠি দিয়ে যন্ত্রটি দ্রুত মেরামতের তাগাদা দেওয়া হয়। এরপর গত ২৯ নভেম্বর মুখ্য কারিগরি ব্যবস্থাপকের কক্ষে এক সভায় দ্রুত যন্ত্রটি মেরামতের কথা বলা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যন্ত্রটি মেরামতের দায়িত্ব পর্যন্ত দেওয়া হয়।

গত বুধবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথ ল্যাব ইউনিটটি বন্ধ। ওই ল্যাবেই রয়েছে এনজিওগ্রাম যন্ত্র। ওই ইউনিটের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শেখ হানিফ জানান, এখানে মাত্র দুই হাজার টাকায় এনজিওগ্রাম করানো হতো। বেসরকারি হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করাতে খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় এখন তাঁর কাজ নেই। অনেক দূর থেকে রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। কবে যন্ত্রটি ঠিক হবে, সে বিষয়ে রোগীরা সব সময় ফোন করে খবর নিচ্ছেন।

হাসপাতালে কথা হয় যশোর থেকে আসা নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি তাঁর বাবা রহমত উল্লাহকে নিয়ে এসেছেন এনজিওগ্রাম করানোর জন্য। নাসির উদ্দিন বলেন, চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে এনজিওগ্রাম করানোর কথা বলেছেন। শুনেছেন কম খরচে আবু নাসের হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করা যায়, তাই এখানে এসেছেন। এসে দেখেন এনজিওগ্রাম যন্ত্র নষ্ট।

হাসপাতালের উপসহকারী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম বলেন, খুলনা বিভাগের সব সরকারি হাসপাতালের মধ্যে কেবল এখানে একটি এনজিওগ্রাম যন্ত্র রয়েছে। এ কারণে এখানে রোগীর চাপ বেশি। যন্ত্র নষ্ট হওয়ার পরপরই টেকনিশিয়ান ডেকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করানো হয়েছে। এটি মেরামত করতে তাঁরা একটি খরচের তালিকাও দিয়েছেন। এটি মেরামতের জন্য মেডিট্রাস্ট নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মেডিট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, যন্ত্রটি মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পাওয়া গেছে। কার্যাদেশ পেলে তাঁরা কাজ শুরু করবেন।

আবু নাসের হাসপাতালের পরিচালক বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, এই হাসপাতাল গরিব রোগীদের জন্য একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আটজন রোগীর এনজিওগ্রাম করানো হতো। যন্ত্রটি বন্ধ থাকায় রোগীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। আর ১৫–২০ দিন পর যন্ত্রটি সফল হবে বলে জানান তিনি।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় দুই কোটি জনগোষ্ঠীর এই খুলনা বিভাগে মাত্র একটি সরকারি এনজিওগ্রাম মেশিন রয়েছে, এটা যেমন লজ্জার তেমনি যন্ত্রটি পাঁচ মাস ধরে নষ্ট, সেটি আরও বেশি অবমাননাকর। যন্ত্রটি দ্রুত চালু করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।