পুরস্কৃত হলেন বিজয়ী তিন লেখক

‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই: ১৪২৪’-এর পুরস্কার বিতরণীকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছিল সাহিত্যানুরাগীদের প্রীতিসমাবেশ। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যার এই আয়োজনে জড়ো হয়েছিলেন দেশের অগ্রগণ্য ও প্রতিশ্রুতিশীল নবীন লেখকেরা। উপস্থিত ছিলেন প্রকাশক ও গ্রন্থানুরাগীরা। এই আয়োজনে এবারের বিজয়ী লেখকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার।

এবার সৃজনশীল শাখায় যৌথভাবে মাসুদ খানের কাব্যগ্রন্থ প্রসন্ন দ্বীপদেশ ও সুমন রহমানের গল্পের বই নিরপরাধ ঘুম এবং মননশীল শাখায় শাওন আকন্দের গবেষণাগ্রন্থ বাংলাদেশের তাঁতশিল্প পুরস্কৃত হয়েছে। মাসুদ খানের বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা ‘পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স’। সুমন রহমানের বইটি বেরিয়েছে ‘প্রথমা প্রকাশন’ থেকে। আর শাওন আকন্দের বইয়ের প্রকাশক ‘দেশাল’।
প্রথম আলোর উদ্যোগে ১৫ বছর ধরে মননশীল ও সৃজনশীল—এই দুই শাখায় দুটি বইকে প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের জন্য নির্বাচিত করা হয়। তবে সৃজনশীল শাখায় এবার বিচারকমণ্ডলী পুরস্কারের জন্য দুটি বইকে যৌথভাবে নির্বাচন করেন। অনুষ্ঠানে পুরস্কারজয়ী তিন লেখকের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও অভিজ্ঞানপত্র দেওয়া হয়। পরিয়ে দেওয়া হয় উত্তরীয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। এরপর পর্দায় দেখানো হয় প্রথম আলোর ২০ বছরের পথচলা, উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘২০ বছর’। একে একে পর্দায় দেখানো হয় অনম বিশ্বাস নির্মিত ‘আলো’, রেদওয়ান রনি নির্মিত ‘আলোর পাঠশালা’ প্রামাণ্যচিত্র। প্রথমা প্রকাশনের ডিজিটাল বুকস্টোর ‘প্রথমাডটকম’ নিয়ে তৈরি করা একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয়।
শিল্পী সায়ানের গান পরিবেশনার পরে শুরু হয় পুরস্কার প্রদান পর্ব। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আনিসুল হক প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফকে।
সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘সাহিত্য মানুষের স্বপ্নকে জাগিয়ে রাখে, স্বপ্নকে গতি দেয়। সব প্রতিকূলতার মধ্যেও সাহিত্য মনকে জাগিয়ে রাখে। সেটি আমরা উদ্‌যাপন করতে চেয়েছি। শ্রেষ্ঠ সাহিত্যগুলো মানুষের গোচরে এনে জীবন্ত রাখার স্বপ্ন নিয়ে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।’
এবার বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন লোকসংস্কৃতিবিদ শামসুজ্জামান খান। সদস্যরা হলেন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, ভীষ্মদেব চৌধুরী, শাহীন আখতার ও মোহাম্মদ আজম।

‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই: ১৪২৪’ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিচারক ও দুই বিজয়ী লেখক। বাঁ থেকে মোহাম্মদ আজম, ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, শাওন আকন্দ (বিজয়ী), শামসুজ্জামান খান, সুমন রহমান (বিজয়ী), ভীষ্মদেব চৌধুরী ও শাহীন আখতার। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে।  ছবি: প্রথম আলো
‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই: ১৪২৪’ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিচারক ও দুই বিজয়ী লেখক। বাঁ থেকে মোহাম্মদ আজম, ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, শাওন আকন্দ (বিজয়ী), শামসুজ্জামান খান, সুমন রহমান (বিজয়ী), ভীষ্মদেব চৌধুরী ও শাহীন আখতার। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

শামসুজ্জামান খান তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সাহিত্য পুরস্কারের জন্য অনেক তদবির হয়, এতে বিব্রত হতে হয়। এই পুরস্কারের জন্য কেউ কোনো তদবির করেননি, এটা ভালো লেগেছে। যে বইগুলো পুরস্কার পেয়েছে, এর বাইরেও বেশ কিছু বই বিচারকদের মুগ্ধ করেছে।’
পুরস্কার বিতরণ শুরু হয় মননশীল শাখায় বিজয়ী শাওন আকন্দের অভিজ্ঞানপত্র পড়ার মধ্য দিয়ে। অভিজ্ঞানপত্র পড়েন ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। উত্তরীয় পরিয়ে দেন শাহীন আখতার। ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন বিচারকেরা।
প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে শাওন আকন্দ বলেন, ‘বই লিখে আগে কখনো পুরস্কার পাইনি। কেউ আমার লেখা বই প্রকাশ করতে চাইত না।’ প্রয়াত মা ও বোন এবং গবেষণা প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
সৃজনশীল শাখায় বিজয়ী মাসুদ খান বিদেশে। তাঁর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন ভগ্নিপতি আফজাল হোসেন। মাসুদ খানের অভিজ্ঞানপত্র পড়েন মোহাম্মদ আজম। ভিডিও বার্তায় উপস্থিত থাকতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন মাসুদ খান। তিনি বলেন, ‘এই পুরস্কার পাওয়ায় অনুপ্রাণিত বোধ করছি।’
সুমন রহমানের অভিজ্ঞানপত্র পড়েন ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন ভীষ্মদেব চৌধুরী। সুমন রহমান বলেন, ‘এ অনুষ্ঠানে আগেও এসেছি, দর্শকসারিতে বসেছি। এবার পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠলাম। আমি আমার মতো করেই লিখব। তবে বাজে লেখা দিয়ে পাঠকদের ভারাক্রান্ত করব না।’
অনুষ্ঠান শেষ হয় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, ‘বইয়ের ব্যাপারে দেশের মানুষের আগ্রহ আছে। সব ধরনের বই মানুষ কেনে, সংগ্রহ করে।’
মতিউর রহমান বলেন, অর্থনীতি, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন অভূতপূর্ব। আবার বিভিন্ন সমস্যাও রয়েছে। প্রথম আলো সব ক্ষেত্রে, সব সময় বাংলাদেশের জয় দেখতে চায়। এই জয় অবশ্যম্ভাবী, হয়তো সময়সাপেক্ষ। সবার মিলিত চেষ্টার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের জয় সম্ভব।